যেভাবে জামায়াত বার বার ফাঁদে পা দেয়

আজকের পত্রিকাগুলোতে স্টিফেন র‍্যাপের বক্তব্য পড়ে পোস্টটা দিচ্ছি। বোঝা যাচ্ছে, আমেরিকা আস্তে আস্তে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে তার আগের অবস্থান থেকে সরে আসছে। প্রায় দশবছর ধরে বিভিন্ন ঘটনা বিশ্লেষণ করে আমার ধারণা হচ্ছে, জামায়াতের জন্য আরো বড় ফাঁদ রয়েছে সামনে। কয়েকটি ঘটনা মনে করার জন্য অনুরোধ করছি:

১. আমেরিকান রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাস বাংলাদেশে আসার পর সবথেকে বেশী আলোচিত যে দুটো উক্তি করেন তার একটি হচ্ছে 'জামায়াত একটি গণতান্ত্রিক দল, এর সাথে জঙ্গীবাদের কোন সম্পর্ক নেই।' (অপর উক্তিটি ছিল তৃতীয় শক্তি নিয়ে)। জামায়াতের উপর মহলে অনেক দিন ধরে হ্যারি কে টমাস সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা দেখেছি। জামায়াতের একজন প্রভাবশালী পরামর্শক তো একবার বলেই ফেললেন যে, তার মনে হয়েছে হ্যারি জামায়াতের রুকন।

হ্যারি এ সময়ে জামায়াতের শতভাগ আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হন।

২. জোট ক্ষমতায় থাকাকালে ডিজিএফআইতে কিছু সাবেক শিবির-কর্মীকে দিয়ে জামায়াতের সাথে যোগাযোগের কাজ করা হতো। তারা দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতের আস্থা অর্জন করে। তাদের মাধ্যমে জামায়াতকে কয়েকটি বিষয়ে রাজী করানো হয়:

ক. ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বায়তুল মোকাররমের সামনে চারিদিকে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র কর্মীদের মধ্যে মিটিং করানো। এই মিটিং এর কথা জানানো হলে বিভিন্ন স্থানে নেতারা কর্মীদের প্রশ্নের সম্মুখীন হন। তখন বলা হয় মিটিং এর নিরাপত্তা দিবেন স্বয়ং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। আসলে পরিকল্পনা ছিল সেইদিনই জামায়াতের প্রথম সারির সকল নেতাকে হত্যা করা এবং এই অযুহাতে মার্শাল ল' দেয়া। শিবিরের অকুতভয় কর্মীদের জন্য তা সম্ভব হয়নি।

খ. কেয়ারটেকার সরকারের সব কিছুকে নীরবে সমর্থন দেয়া।

মাহমুদুর রহমানও বিষয়টি কয়েকদিন আগে তার কলামে উল্লেখ করেছেন যে, ডিজিএফআই এর পরামর্শে জামায়াত কেয়ারটেকার সরকারকে নীরব সমর্থন দিয়ে যায়।

৩. ২০০৮ এর নির্বাচনে না যাবার সিদ্ধান্তে প্রায় শেষ পর্যন্ত অনড় ছিলেন খালেদা জিয়া। জামায়াত নেতারা (নিজামী-মুজাহিদ) তাকে রাজী করানোর চেষ্টা করলে তিনি তাদেরকে বলেন, 'নির্বাচনে যে যেতে চাচ্ছেন, আমাদেরকে দেকে ৫০টা, আপনাদেরকে দেবে ৩টা।' কিন্তু ডিজিএফআই জামায়াত নেতাদেরকে নিয়ত জানাতে থাকে যে তাদের হিসাব অনুসারে জোট ১৫০-১৬০টি আসন পাবে। নয়া দিগন্তও একটি জরিপ করে এই হিসাবই দেয়।

৪. নির্বাচনের পর বিএনপির কোমর ভেঙ্গে গেলেও, জামায়াতের শক্তি অক্ষুন্ন ছিল। সম্ভাবনা ছিল বিএনপি আবার জামায়াতের সাংগঠনিক শক্তির সাহায্যে মাঠে ফিরে আসবে। টিপাইমুখ সহ অন্যান্য ইস্যূতে জামায়াত ময়দানে দাপটের সাথেই ছিল। তখন পরিকল্পনা করা হয় শিবির ভাঙ্গার। ডিজিএফআই থেকে জানানো হয় শিবিরের তৎকালীন সেক্রেটারী শিশির মনির হচ্ছে র'এর এজেন্ট। তাকে সরানো না হলে সে জামায়াতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবী করবে। তাকে শুধু সরানোই হলো না, শিবিরের কার্যকরী পরিষদের সকল সদস্যকে সরানো হলো এবং কয়েক হাজার সাথী-সদস্যকে কারো ছাত্রত্ব শেষ করে, কারো বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিস্ক্রিয় করে দেয়া হলো। চরম সংকটের সময় কার্যকরী পরিষদের সদস্যরা নিজামী সাহেবের সাথে দেখা করতে গেলে তিনি দেখাও করেননি। এভাবে শিবিরের শক্তিকে চার ভাগের একভাগে কমিয়ে আনা হয়। সরকার আর অন্য সকল দল মিলে শিবিরের যে শক্তিক্ষয় করতে পারতো না, তাই করা হলো নেতৃত্বের অদূরদর্শীতার কারণে।

এর ফলে ফারুক হত্যা নিয়ে যখন শিবিরের উপর চরম দমন-পীড়ন চালানো হলো, তখন শিবিরের তেমন কোন প্রতিরোধ শক্তি ছিল না। জামায়াতও হেকমত দেখিয়ে সে সময় নীরব থাকলো। মাহমুদুর রহমানও বলেছেন, শিবিরের উপর নির্যাতনের কোন প্রতিবাদ না হওয়ায় এবার সরকার হাত বাড়ালো জামায়াত নেতাদের দিকে। তাদের গ্রেফতারেও কোন প্রতিবাদ হলো না।

বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, জামায়াত তাদের উপরে সম্ভাব্য নির্যাতন নিয়ে মুসলিম বিশ্ব কিংবা পশ্চিমা বিশ্ব কোথাওই পূর্ব জনমত তৈরী করেনি।

৫. একই ফাদে পড়ে এখন জামায়াত অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যূতে চুপ করে রয়েছে। নারী নীতির মত ইস্যূতে যখন আলেমগণ কঠোর অবস্থানে যাচ্ছেন, জামায়াত তখন একেবারে চুপ। আমিনীর ছেলেকে অপহরণ করা হলো, জামায়াত একটা বিবৃতি পর্যন্ত দিল না। কারণ একটাই, তাতে নেতাদের উপর অত্যাচার হতে পারে।

কিন্তু এর ফলে হতে যাচ্ছে অকল্পনীয় রকমের মারাত্মক। জামায়াত ক্রমেই ইসলামপন্থীদের সমর্থন হারাবে। ফলে আগামী নির্বাচনে বিএনপি তাকে সেইভাবে মূল্যায়ন করবে না। এতে এক পর্যায়ে জামায়াত এককভাবে নির্বাচনও করতে পারে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এলেও জামায়াতকে নিয়ে তারা এরশাদের মত খেলবে। মামলা আর ফাসির ভয় দেখিয়ে তাদেরকে কার্যত নিস্ক্রিয় এবং ধ্বংস করে দিবে।