ছাত্রশিবিরের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের নেপথ্যে

রেজাউল করিম শিবিরের সভাপতি হওয়ার পর থেকেই সমস্যার সূত্রপাত। তার পূর্ববর্তী সভাপতি নেয়ামুল করিমকে সেক্রেটারী জেনারেল বানানোর পরামর্শ দিলেও রেজাউল করিম তা না মেনে শিশির মুহাম্মদ মনিরকে সেক্রেটারী বানায়।

এর কারণ ২ টি।
...
১. শিশির জুনিয়র এবং সে নিরেট অন্ধ আনুগত্য করবে বলে রেজাউল করিম ধরে নিয়েছিল।

২. নেয়ামুল সিনিয়র এবং স্পষ্টবাদী হিসাবে খুবই সুপরিচিত ছিল। এছাড়া যথেষ্ট জনপ্রিয়ও ছিল।

রেজাউল করিম নেয়ামুলকে তার জন্য চ্যালেঞ্জ ভেবেছিল। কার্যকরী পরিষদের মিটিং এ স্পষ্ট বক্তব্য রাখার জন্য ৬ মাসের মধ্যেই নেয়ামুল করিমকে বিদায় দিয়েছিল অনেকটা স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয় দিয়ে।

রেজাউল করিমের একগুঁয়েমী, স্বেচ্ছাচারিতা পরবর্তীতে আরো প্রকট হয়ে উঠে নিম্নলিখিত বিষয়ে ঃ-

১. পি.এইচ.ডি.করার জন্য ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন থেকে প্রাপ্ত প্রায় ২ লক্ষ টাকা পড়ালেখার জন্য ব্যয় না করে একটি কোচিং এর শেয়ার কিনেন রেজাউল করিম। এতে কার্যকরী পরিষদের সদস্য আহমদ জাহিদুল আনোয়ার, মাহবুব আলম সালেহী, গোলাম মাওলা শিমুল, শেখ নেয়ামুল করিম, হাফেজ আবদুল জব্বার খান, মিয়া মুজাহিদুল ইসলাম, শামসুল আরেফীন হাসিব, আবুল কালাম আজাদ, ইঞ্জিনিয়ার ফয়সাল বিন রহমান ও শিশির মনির সহ সিনিয়র সদস্যবৃন্দ তীব্র প্রতিবাদ করেন। তার বলেন নিজেদের তত্ত্বাবধানের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সভাপতির তত্ত্বাবধান আমাদের দায়িত্ব। এটা জনশক্তি জানতে পারলে ভাল হবে না। রেজাউল করিম বিষয়টি মোটেই পাত্তা দেয়নি। এর পর থেকেই তাদেরকে সংগঠন থেকে সরানোর জন্য রেজাউল করিম পরিকল্পনা করে।

২. মাহবুব আলম সালেহী, যিনি একাধারে জনপ্রিয় এবং মেধাবী ছিলেন শুধুমাত্র স্পষ্টবাদিতার কারণে তাকে সুইডেনে পাঠিয়ে সংগঠনকে একজন মেধাবী নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত করা হলো।

৩. মিয়া মুজাহিদুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ বিদায়ের জন্য তাদেরকে জামায়াত এর প্রতিষ্ঠানে চাকুরী দেয়া হয়েছে।

৪. বাকীদেরকে কোন সঠিক ব্যবস্থা না করেই বিদায় দিয়েছে। এতে সংগঠনের মেরু ভেঙ্গে দিয়েছে রেজাউল করিম। এই আওয়ামী লীগের আমলে দেদারছে সিনিয়রদের বিদায় দিয়ে নতুন নজির স্থাপন করল।

৫. ইতিহাস-ঐতিহ্যকে পদদলিত করে রেজাউল করিম তার মনের মত লোকদেরকে কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ এবং সেক্রেটারীয়েট সদস্য বানিয়েছে। জেলা সভাপতি এবং কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত সাথী শাখার সভাপতিকে কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় বিভাগের সদস্যদেরকে সেক্রেটারীয়েট সদস্য বানিয়েছে, যা পূর্বের কোন সভাপতি করেন নাই।

৬. যারা রেজাউল করিম এর অন্ধ আনুগত্য করে , তেল ঢালতে পারে তাদেরকে কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল বানিয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি জাকীরকে কেন্দ্রীয় নেতা বানানো হয়েছে। অথচ এই জাকীর এর সদস্য পদ স্থগিত ছিল। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতিকে নিয়মিত তেল প্রদানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতির পদ বাগিয়ে নিল। যে ড.আবু ইউসুফের নির্দেশে শহীদ জোবায়ের কে লীগের ছেলেরা হত্যা করলো সেই ইউসুফকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে এই জাকীর। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের আসন টি পাকাপোক্ত করে নেয়। আর রেজাউল করিমের অন্ধ আনুগত্যের পুরস্কার স্বরূপ এখন সে কেন্দ্রীয় লিডার। শোনা যাচ্ছে তাকেই পরবর্তী সেক্রেটারী বানানো হবে। আইনবিদ আবু সাঈদ খান হলো রেজাউল করিমের অন্ধ আনুগত্যশীল। শোনা যাচ্ছে পুরস্কার স্বরূপ তাকে বায়তুল মাল সম্পাদক করা হবে। দেলোয়ার হোসেন সাঈদী হলো আরেক তেলবাজ। রেজাউল করিমের অন্ধ পাগল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেক্রেটারী হত্যার পিছনে তার দুরদর্শী নেতৃত্বের অভাব ছিল। কিন্তু শুধুমাত্র রেজাউল করিমের আস্থাভাজন হওয়ার কারণে তাকেও পরবর্তী সেক্রেটারী বানানো হতে পারে।

৭. কেন্দ্রীয় সভাপতি থাকা অবস্থায় অনেকেই বিয়ে করতে পছন্দ করেন। এতে লাভ হলো - সংসারের সকল জিনিস সংগঠনের বিভিন্ন শাখা হতে গিফট পাওয়া যায়। যেমন-ঢাকা মহানগরী উত্তর যদি আলমারী দেয় তবে চট্টগ্রাম মহানগরী দিবে ফ্রিজ, অন্য শাখা দিবে টেলিভিশন, খাট, সোফা,শাড়ী, সেলফ, টেবিল, ভরি ভরি অলংকার, ড্রেসিং টেবিল, কম্পিউটার ইত্যাদি। আর যদি ছাত্রী সংস্থার কেন্দ্রীয় সভানেত্রী বা সেক্রেটারী বা কেন্দ্রীয় নেত্রী বিয়ে করা যায় তা হলে তো সোনায় সোহাগা। রেজাউল করিম এর উপরে সংগঠনের কেন্দ্রীয় বায়তুল মাল ফান্ড থেকে লক্ষাধিক টাকা গ্রহণ করেছেন বিয়ে উপলক্ষ্যে।

৮. লক্ষাধিক টাকা গ্রহণ করে ফ্ল্যাট করাটা এখন ওপেন সিক্্েরট।

৯. শিশির মনিরের স্পষ্টবাদিতা সর্বজনবিদিত। যুদ্ধপরাধ, স্বাধীনতা যুদ্ধ ইত্যাদি বিষয়ে তার ভূমিকা ছিল সৎ সাহসের বহিঃপ্রকাশ। এ ব্যাপারে সংগঠনের স্পষ্ট ভূমিকার কথা শিশির মনির প্রায়ই বলতো। বর্তমান প্রজন্মের কথা বিবেচনা করো সে এসব করতো। এটা এটা জামায়াতের আঁতে ঘা লাগে। শিশিরকে সরানোর জন্য তখন থেকেই জামায়াত চাপ দিতে থাকে। রেজাউল করিম ও জানে, জামায়াতের অন্ধ আনুগত্য না করলে পরবর্তীতে চাকুরী কিংবা লিডার হওয়া যাবে না। তাই শিশিরকে সে সরিয়ে দেয়। বুলবুল, মঞ্জু, সেলিম, জাহিদ সবাই জামায়াতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে। তাই জামায়াতের চাকুরী পেতে হলে জামায়াতের কথা শুনতে হবে। শিশির মনিরকে তাই বলির পাঁঠা হতে হল।

১০. কেন্দ্রীয় অফিসে প্রায়ই হাই ফাই খাওয়া-দাওয়া হয়। বৈঠক মানেই বিরিয়ানী, গরু, মুরগী, পোলাও, মাছ, খাসী ইত্যাদি। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল আহমদ জাহিদুল আনোয়ার , শিশির মনির সহ একাধিক সিনিয়র কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল। বিষয়টি রেজাউল করিম পাত্তাই দেয়নি এ বলে যে, আমাদের টাকা আছে আমরা যা খুশি খাব। বায়তুল মালের বিশাল ফান্ড আছে আমাদের। তাই খাওয়া-দাওয়ায় কোন প্রবলেম নেই।

১১. সফরে বিমানে সভাপতি বা সেক্রেটারী প্রায়ই যাওয়া আসা করেন। অনেক শাখা সভাপতিও বিমানে যাতায়াত করেন। এতে যাতায়াত খাতে বিশাল ব্যয় হয় যা বায়তুল মালের ফান্ড হতে বহন করা হয়। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সেই একই উত্তর। এভাবে বায়তুল মালের টাকার যা খুশি তা ব্যবহার করে এই দায়িত্বশীলরা। সংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের ফল এই বায়তুল মাল। আর কেন্দ্রীয় নেতারা তা নিজেদের ভোগ বিলাসের জন্য ব্যয় করে। ছিঃ ! ছিঃ !

১২. রেজাউল করিম খাওয়ার সময় পিঁয়াজ খেতে খুবই পছন্দ করেন। বিষয়টি নিয়ে শিশির মনির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এই বলে যে, রাসূল(সাঃ) এটা পছন্দ করতেন না। এটা বাদ দিলে ভাল হয়। বিষয়টি শিশির মনিরের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।

১৩. সকালে ফজরের পর ঘুমানো নেতাদের পুরানো অভ্যাস। কর্মীরা কাজ করবে আর নেতারা ঘুমাবে এটাইতো নিয়ম !! বিষয়টি হাফেজ আবদুল জব্বার খান তুললে তাকে বিদায় দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন রেজাউল করিম।

এ ধরণের আরো অনেক ঘটনা আছে যা বেদনাদায়ক,

মর্মান্তিক। সভাপতির একচ্ছত্র আধিপত্য সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক। এর রোধ প্রয়োজন।