বিভিন্ন সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় ইসলামী ছাত্রশিবির সম্পর্কে প্রচারিত খবরের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সভাপতির বিবৃতিঃ

তারিখঃ ২৩/০২/২০১০

বিভিন্ন সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সম্পর্কে প্রচারিত খবরের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জনাব মুহাম্মাদ রেজাউল করিমের বিবৃতিঃ

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সংবিধান অনুযায়ী সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে এক বছরের জন্য কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধান অনুযায়ী ২০১০ কার্যকালের জন্য ১৮ জানুয়ারী সদস্যরা ভোট দিয়ে আমাকে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত করে। এরপর কার্যকরি পরিষদের সাথে পরামর্শ করে সংগঠনের সেক্রেটারী জেনারেল মনোনয়নের কাজ সম্পন্ন হয়। তারপর সদস্য শাখা ও সাথী শাখাসমূহের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

গত ৩০ জানুয়ারী ২০১০ কার্যকরি পরিষদের সভায় উদ্ভূত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ পূর্বক যথার্থ সমাধানের জন্য সুপারিশমালা প্রণয়নের দায়িত্ব দিয়ে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠিত হয়। এটাও সিদ্ধান্ত হয় যে, এখন থেকে সংগঠনের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

উক্ত সিদ্ধান্তের আলোকে সংগঠনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ও কার্যকরি পরিষদের নির্বাচনের প্রস্তুতি চলতে থাকে। এর মধ্যেই সরকার চিরুনি অভিযানের নামে সারা দেশে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওপর গ্রেফতার ও নির্মূল অভিযান শুরু করে। জামায়াত-শিবিরের প্রায় ৭ শতাধিক ভাইকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। প্রায় ৩ শত ভাইকে নেয়া হয় রিমান্ডে। ছাত্রশিবিরের সর্বপর্যায়ের জনশক্তিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হোস্টেল, ছাত্রাবাস ও মেস থেকে বিতাড়িত করা শুরু হয়, যা এখনও অব্যাহত আছে। ফলে সংগঠনের স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

সংবিধান অনুযায়ী কার্যকরি পরিষদ গঠিত না হওয়ায় সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল মনোনয়ন, পরিকল্পনা গ্রহণ ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনায় সমস্যা দেখা দেয়। এমতাবস্থায় সংগঠনের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে ২০১০ কার্যকালের জন্য কার্যকরি পরিষদ গঠনের লক্ষ্যে ২১-২-২০১০ তারিখে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। নির্বাচন চলাকালে ২২-২-২০১০ তারিখ গভীর রাতে ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় পরিবেশিত খবরে আমি জানতে পারি সেক্রেটারী জেনারেলসহ ২৪ জন কার্যকরি পরিষদ সদস্য পদত্যাগ করেছেন। মিডিয়ার মাধ্যমে এ খবর জেনে আমি অত্যন্ত বিস্মিত ও মর্মাহত হয়েছি।

প্রকৃত পক্ষে ৩০ জানুয়ারী সেক্রেটারী জেনারেল ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে আমার নিকট পদত্যাগ পত্র পেশ করেন। আমি তাকে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করি। কিন্তু তিনি দায়িত্ব পালন করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। অবশেষে আমি গত ২১-২-২০১০ তারিখে তার পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করি। সেই সাথে কার্যকরি পরিষদের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করি। পরিষদের নির্বাচন চলাকালে বিদায়ী পরিষদের কোন কার্যকারিতা থাকে না। ফলে পরিষদের সদস্য হিসেবে পদত্যাগেরও সুযোগ নেই। তদুপরি কেন্দ্রীয় সভাপতির নিকট পদত্যাগ পত্র পেশ না করে প্রচার মাধ্যমে তা পরিবেশন করা দুর্ভাগ্যজনক, অপ্রত্যাশিত, অনাকাঙ্খিত ও অসাংবিধানিক। উল্লেখ্য যে, ২৪ জন পদত্যাগ করেছেন মর্মে যে তথ্য পরিবেশিত হয়েছে তা সঠিক নয়। কাউকে সম্বোধন না করে-- ‘নি¤েœাক্ত স্বাক্ষরকারী আমরা পরিষদ সদস্যরা সংগঠনের পরিষদ সদস্য থেকে স্ব-জ্ঞানে পদত্যাগ করছি’ লিখে সাদা কাগজে ১৮ জন ভাই সই করেছেন বলে শুনেছি। আরও উল্লেখ্য যে, স্বাক্ষরকারী ১৮ জন ভাইয়ের মধ্যে ৯ জন ভাইয়ের স্বাভাবিক ছাত্রজীবন ইতিপূর্বেই শেষ হয়েছে। স্বাক্ষরকারী কয়েকজন ভাই স্বাক্ষর প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমে সহযোগিতা শুরু করেছেন।

ইসলামী ছাত্রশিবির একটি দ্বীনি সংগঠন। এখানে ব্যক্তির সংশোধনের প্রক্রিয়া ইসলাম সম্মতভাবে নিজ নিজ ফোরামে সম্পন্ন হয়ে থাকে। সে প্রক্রিয়ার বাইরে অসাংগঠনিক কোন পদক্ষেপ সংগঠনের পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বিঘিœত করতে পারে। আল্লাহর রহমেত ইসলামী ছাত্রশিবির তার সূচনালগ্ন থেকে বিগত ৩৩ বছর যাবত এ নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশের সচেতন মহলে শৃঙ্খলার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে।

যখন দেশে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নির্মূল করার চক্রান্ত চলছে তখন এ ঐতিহ্যবাহী শহিদী কাফেলার পবিত্র পরিবেশকে বিঘিœত ও আন্দোলনের স্বাভাবিক ধারাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, এমন ভূমিকা থেকে সকলেরই বিরত থাকা উচিত। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এ কাফেলার যাত্রা শুরু হয়েছে। তাই সংগঠনের সংবিধান, বিধি-বিধান এবং নীতিমালা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন সর্বস্তরের জনশক্তির পবিত্র ও ঈমানী দায়িত্ব। আল্লাহর কাছে জবাবদিহির অনুভূতি নিয়ে সে দায়িত্ব পালনের জন্য সর্বস্তরের জনশক্তিকে আমি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।



মুহাম্মাদ রেজাউল করিম
সভাপতি
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির