প্রশ্ন শিবির সভাপতিকে নিয়ে

ইসলামী ছাত্রশিবিরের নবনির্বাচিত সভাপতি মুহাম্মদ রেজাউল করিমের নেতৃত্বে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সংগঠনের বিক্ষুব্ধ একটি অংশ। 'সেভ শিবির' শিরোনামে একটি ই-মেইলবার্তায় তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থার কথা জানানো হয়।
'আমরা বিবাহিত প্রেসিডেন্ট চাই না। আমরা চাই শিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও মেডিক্যাল থেকে কাউকে প্রেসিডেন্ট করুক। জামায়াত ষড়যন্ত্র করে বিশেষ করে, মুজাহিদ (আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ) শিশির মনিরকে সরিয়ে দিয়ে বিবাহিত রেজাউলকে রেখে দিয়েছে। সময় থাকতে রক্ষা করুন প্রিয় সংগঠন শিবিরকে।' প্রতিবেদকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো ই-মেইলবার্তায় এসব কথা বলা হয়। এতে শিবির সভাপতির বিরুদ্ধে সংগঠনের অর্থের অপচয় এবং পিএইচডিতে নকলেরও অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগ সম্পর্কে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ বলেন, 'ছাত্রশিবির একটি স্বতন্ত্র সংগঠন। তারা নিজেরাই তাদের নেতৃত্ব ঠিক করে। এখানে আমার বা জামায়াতের কারো হস্তক্ষেপের সুযোগই নেই।'
গত ১৮ জাুনয়ারি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সদস্যদের গোপন ভোটে মুহাম্মদ রেজাউল করিম দ্বিতীয় মেয়াদে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন। অন্যদিকে শিশির মোহাম্মদ মনির সেক্রেটারি জেনারেল পদ থেকে বাদ পড়েন। তাঁর জায়গায় নতুন সেক্রেটারি মনোনীত হন ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন। অনেকেরই ধারণা ছিল, শিশির মনিরই সভাপতি হচ্ছেন।
কিন্তু শিশির বাদ পড়ায় শিবিরের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়। কিন্তু নেতৃত্ব নিয়ে সংগঠনে বাদানুবাদের চর্চা না থাকায় বিষয়টি দৃশ্যমান হয়নি। তবে বিক্ষুব্ধ অংশটি শিবির সভাপতি রেজাউল করিমকে নিয়ে কয়েকটি নৈতিক প্রশ্ন তোলে। তাতে শিবির সভাপতির লেখা দুটি গ্রন্থ রচনার স্বকীয়তা ও প্রকাশনার খরচে অস্বচ্ছতার অভিযোগ তোলা হয়। সংগঠনের বায়তুল মাল (কোষাগার) থেকে তিনি প্রকাশনার খরচ নির্বাহ করেন বলে দাবি করা হয়।
ই-মেইলবার্তায় আরো অভিযোগ করা হয়, সংগঠনের টাকায় শিবির সভাপতি কলাবাগানে তাঁর নতুুন ভাড়া বাসায় দেড় লাখ টাকার আসবাবপত্র কেনেন। শিবির সভাপতির পিএইচডি অধ্যায়নেও নকলের অভিযোগ তোলা হয়।
জানা গেছে, ছাত্রশিবিরের সভাপতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে 'ইসলামী সংস্কৃতির' ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন। সম্প্রতি তিনি 'জাতীয় জীবনে মূল্যবোধের অবক্ষয়' ও 'সংস্কারের রাজনীতি নয়, রাজনীতির সংস্কার' শীর্ষক দুটি বই লেখেন। বই দুটি প্রকাশ করেছে মগবাজারের প্রফেসর্স বুক কর্নার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ রেজাউল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এ ধরনের একটি খবর আমিও পেয়েছি। কারা করেছে, তা খোঁজার চেষ্টা করছি।'
অভিযোগের 'সবটাই মিথ্যা' দাবি করে রেজাউল করিম বলেন, 'আমি বিয়ে করেছি তা ঠিক। কিন্তু বাসার ফার্নিচার কেনায় আমার পরিবারের সদস্যরা সাপোর্ট দিয়েছে।'
রেজাউল করিম আরো বলেন, 'আমার বই দুটি প্রকাশ করেছে প্রফেসর্স বুক কর্নার। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন, ওদের টাকায় বই বের হয়েছে। এমনকি ওরা আমাকে কিছু টাকাও দেবে বলেছে।'
ই-মেইলবার্তার খবর জানিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ছাত্রশিবিরের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল শিশির মোহাম্মদ মনির বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, 'তাই নাকি! আয় হায়রে... এগুলোর কোনো সত্যতা নেই। আমি নিশ্চিত, গণ্ডগোল বাধানোর জন্য কেউ কনসপেরেসি করছে। আমি এখনই প্রেসিডেন্টকে ফোন করছি।' ছাত্রশিবিরে এ ধরনের প্র্যাকটিস নেই বলে শিশির জানান।
সূত্র জানিয়েছে, ই-মেইলবার্তাটি নিয়ে ছাত্রশিবিরের ভেতরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বার্তাটি কিভাবে, কোথা থেকে ছাড়া হয়েছে, তা জানতে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ওই সূত্র জানিয়েছে, মুহাম্মদ রেজাউল করিমসহ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ২৩ জন শিবিরের সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন। এর মধ্যে মাত্র ছয়জন সেক্রেটারি জেনারেল পদ থেকে বিদায় নিয়েছেন, তাঁরা সভাপতির দায়িত্ব পাননি।
শিবির একটি ক্যাডারভিত্তিক সংগঠন। এর নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দলের কোনো অভিযোগ সাধারণত ওঠে না।