বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের অধিকাংশ সদস্য কর্তৃক কেন্দ্রীয় সভাপতি জনাব রেজাউল করিমের উপর অনাস্থা প্রস্তাব

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম - ২০ ফেব্রুয়ারী ২০১০

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির একটি আদর্শিক ছাত্র সংগঠন যার প্রতিটি স্তরের জনশক্তি পরিচালিত হয় সততা, আনুগত্য, পরামর্শ ও এহতেসাব এর মাধ্যমে। গীবত, গর্ব, অহংকার আর প্রদর্শনেচ্ছার যেখানে বিন্দুমাত্র স্থান নেই সেখানে আজ এ মানবিক দুর্বলতাগুলো আমাদের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে বসেছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী ও সংঘবদ্ধ সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। যে সত্য ভিতের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল ছাত্রশিবির সে ভিত আজ নড়বড়ে হয়ে উঠেছে। সমাজের সাধারণ মানুষ ও শুভাকাঙ্খীদের দোয়া ও সৎ পরামর্শ যেখানে ছাত্রশিবিরকে জনগণের মনের মনিকোঠায় স্থান করে দিয়েছে, আজ সে সংগঠন জনশক্তি ও শুভাকাঙখীদের কাছে হতে বসেছে প্রশ্নবিদ্ধ। যে সংগঠনের মান ও দক্ষতা নিয়ে অন্যান্য সংগঠন প্রশ্ন তুলতে ভয় পেত, আমাদের প্রাণপ্রিয় সে সংগঠনকে নিয়ে অনাস্থা তৈরী হয়েছে। বর্তমান কেন্দ্রীয় সভাপতি জনাব রেজাউল করিম এর স্বেচ্ছাচারীতা সংগঠনকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। সর্বশেষ ২০০৯ সালের কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলনের পর সারা দেশে এর কালো ছায়া পুরো সংগঠনকে করেছে কলুষিত।

আজ এ পর্যায়ে জনাব রেজাউল করিম দ্বারা উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরছি।

(১) বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এর সংবিধানের ২৩নং ধারা মতে “বছরে কার্যকরী পরিষদের দুটি সাধারণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রয়োজন বোধ করলে অথবা কার্যকরী পরিষদের এক পঞ্চমাংশ সদস্য অথবা সংগঠনের সদস্যদের এক দশমাংশ কেন্দ্রীয় সভাপতির নিকট লিখিতভাবে দাবি করলে কার্যকরী পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। কার্যকরী পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠানের দাবি পেশ করার দিন থেকে এক মাসের মধ্যেই অধিবেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গত ২২ জানুয়ারী ’১০ জরুরী কার্যকরী পরিষদের অধিবেশন আহবান করার জন্য ১৩জন কার্যকরী পরিষদের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি নোটিশ জনাব রেজাউল করিম বরাবর প্রদান করা হয় কিন্তু অধিবেশন আহবান না করার প্রচেষ্টায় ১৩ জনের প্রত্যেকের সাথে কথা বলে প্রভাবান্বিত করার চেষ্টা করেছেন (নিজে ও জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বশীলদের দিয়ে)।

(২) ২৬ জানুয়ারী ৫২৩ জন এবং ২৭ জানুয়ারী পূর্বেরসহ মোট ৭৭৫ জন (এক দশমাংশ, ৪১৩ জন) সদস্যের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি অনাস্থা প্রস্তাব জনাব রেজাউল করিম ও সকল পরিষদ সদস্যের কাছে জমা দেয়া হয়। তিনি ময়মনসিংহ শহর ও বাকৃবি শাখা সেটআপ করার জন্য বাসা থেকে রওয়ানা হন। পরে সদস্যদের প্রশ্নের মুখে সেটআপ না করে ঢাকায় ফিরেন।

(৩) ছাত্রশিবিরের ইতিহাসে এবার ঐতিহ্য বিরোধী অধ্যায় রচিত হয়েছে ২৪ জানুয়ারী নতুন কার্য়করী পরিষদের জন্য ভোটার তালিকা তৈরী করে শাখায় পাঠানোর মধ্য দিয়ে । অন্যদিকে তখনও ৮টি সদস্য শাখা ও ২টি কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত সাথী শাখার সেটাপ করার বাকি ছিল। বরিশাল মহানগরীতে সেটাপ না করে মহানগরী সভাপতি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এর ছাত্রজীবন শেষ দেখানো হয়।

(৪) বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সংবিধানের ধারা ২৬ এ বলা হয়েছে “কেন্দ্রীয় সভাপতি কার্যকরী পরিষদের সাথে পরামর্শ করে সেক্রেটারী জেনারেল ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিভাগীয় সেক্রেটারীর সমন্বয়ে সেক্রেটারিয়েট গঠন করবেন। কেন্দ্রীয় সভাপতি কার্যকরী পরিষদের সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনবোধে পূর্ণ বা আংশিকভাবে তার সেক্রেটারিয়েটে রদবদল করতে পারবেন।”

অন্যদিকে সংবিধানের ধারা-১৭ এ বলা হয়েছে “কেন্দ্রীয় সভাপতি সব সময় কার্যকরী পরিষদের পরামর্শ অনুসারে কাজ করবেন। কিন্তু দৈনন্দিন কাজ সম্পাদন ও কার্যকরী পরিষদের সিদ্ধান্ত নেই এমন কোন বিষয়ে জরুরী ও সাময়িক পদপে গ্রহণের প্রয়োজন হলে তিনি এ নিয়মের অধীন থাকবেন না।”

সেক্রেটারী জেনারেল মনোনয়ন অতীব গুরুত্বপূর্ণ পদ বিধায় এ দুটো ধারা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কার্যকরী পরিষদ এর পরামর্শের আলোকেই সেক্রেটারী জেনারেল মনোনীত হবেন। অন্যদিকে সদস্য শাখা, কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত সাথী শাখা ও জেলা শাখার সেক্রেটারী মনোনয়নের ক্ষেত্রে কোন নির্দেশনা সংবিধানে নেই। জনাব রেজাউল করিম শুধু ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে সেক্রেটারী জেনারেলের মনোনয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। যার ফলাফল সারা দেশের জনশক্তির মধ্যে প্রতিফলিত হচ্ছে। আজ জনশক্তির মধ্যে স্বতঃস্ফুর্ততা হারিয়ে গেছে। শুভাকাঙ্খী ও জনশক্তিদের প্রশ্নবানে জর্জরিত আজ গোটা বাংলাদেশের দায়িত্বশীলরা।

(৫) বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এর বর্তমান কেন্দ্রীয় সভাপতি জনাব রেজাউল করিম বায়তুলমালের অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতা ও অস্বচ্ছতার পরিচয় দিয়েছেন। বায়তুলমাল কমিটি গঠন করলেও তিনি কমিটির কোন অনুমোদন ছাড়াই লক্ষ  লক্ষ টাকা খরচ করেছেন বিনা দ্বিধায়। ২০০৯ সালের জুন মাসে এসে ২০০৭ ও ২০০৮ সালের ভাউচার নাম মাত্র জমা দিয়েছেন যাতে কোন সাপোর্টিং ভাউচার বা রিসিভড্ কপি নেই। যার পরিমাণ প্রায় ২৩৭০০০/- (দুই লক্ষ সাইত্রিশ হাজার টাকা)। অন্যদিকে একজন কাপ সদস্যের থেকে গ্রহন করা রিসিভড্ কপি বায়তুলমাল বিভাগে ভাউচার হিসেবে জমা দিয়েছেন। অথচ সেই কাপ সদস্যের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায় তিনি এই টাকা নেন নি।

জনাব রেজাউল করিম গত ডিসেম্বর মাসে বিয়ে করার পূর্ব প্রস্তুতি স্বরূপ চার মাসের বাসা ভাড়া ও আসবাবপত্র ক্রয় বাবদ ১,০০,০০০/- (একলক্ষ টাকা) বায়তুলমাল থেকে গ্রহণ করে ৭৫০০০/- (পচাত্তর হাজার) টাকার ভাউচার প্রদান করেন। পরে সমালোচনার মুখে চেক দিয়ে নিজেকে এ থেকে বাঁচানোর চেষ্টার অংশ হিসেবে বায়তুলমাল থেকে ধার নিয়েছেন বলে প্রচার করেন। কিন্তু বায়তুলমাল থেকে ধার হিসেবে গ্রহণ করলে ভাউচার প্রদানের যৌক্তিকতা থাকেনা। তিনি পিএইচডি করার নামে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার টাকা) গ্রহণ করেছেন এবং পিএইচডি করতে সহায়তাকারী শিক্ষককে অনেক সুযোগ সুবিধা প্রদান করেছেন কমিটির কোন অনুমোদন ছাড়াই।

(৬) জনাব রেজাউল করিম বিভিন্ন সময়ে জঘন্য মিথ্যাচার করেছেন বিভিন্ন দায়িত্বশীল সম্পর্কে যা খুবই নিন্দনীয়।

(ক) কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচনের আগে রেজাউল করিম তার ছাত্রজীবন ও বিয়ে সংক্রান্ত বিষয়ে অধিকাংশ সেক্রেটারিয়েট সদস্যদের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ করেন। তিনি বলেন, ছাত্রজীবন অব্যাহত রাখার ব্যাপারে উর্ধ্বতন সংগঠনের চাপ আছে, কিন্তু বাস্তবে তার কোন সত্যতা মিলেনি।

(খ) এছাড়া তার লেখা বই, কলাম ও পিএইচডি থিসিস নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

(গ) বিভিন্ন সময়ে সেক্রেটারীয়েট সদস্যদের সাথে কথা বলার সময় ভুল তথ্য দিয়েছেন। বিভিন্ন শাখার সদস্যকে ফোন করে উদ্ভুত পরিস্থিতি ২/৩জন বিশৃংখলাকারী “ট্র্যাকের বাইরের লোকের” কাজ বলে অভিহিত করেছেন।

(৭) সংবিধানের ধারা ১৬ মতে “কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, এই সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য হাসিল, পরিচালনা, কর্মসূচির বাস্তবায়ন এবং সর্বোৎকৃষ্ট সাংগঠনিক শৃংখলা প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণ।” অথচ সংগঠনের সকল শৃংখলা ও নিয়মকানুনকে বাধাগ্রস্ত করে নিজের পদকে পাকাপোক্ত করার জন্য একটি অসহনীয় পরিবেশ তৈরী করেছেন। সংবিধান যে তাকে দায়িত্ব দিয়েছে তাকে সব সময়ই তিনি অবজ্ঞা করেছেন। বিভিন্ন শাখায় সেটআপ করার জন্য জনাব রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত ব্যালটে সদস্যরা ভোট না দিয়ে সেটি ছিঁড়ে বা অপর পৃষ্ঠায় ভোট দিয়ে অনাস্থার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।

(৮) এই প্রেক্ষিতে বিগত ২৮, ২৯, ৩০ জানুয়ারী কার্যকরী পরিষদের জরুরী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। পরিষদে উদ্ভুত পরিস্থিতির উপর সকল পরিষদ সদস্যরা আলোচনা করেন এবং সেখানে প্রায় সকল সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতিরা উপস্থিত ছিলেন। পরিষদে চুড়ান্তভাবে কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ার প্রেক্ষিতে সাবেক ৫জন সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতির নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়। পরবর্তীতে কমিটি সবার সাথে আলোচনা করে একটি প্রস্তাবনা পরিষদের কাছে পেশ করবেন। কিন্তু সর্বশেষ কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজাউল করিম-

১. এই কমিটির ফাইনাল প্রস্তাবনা আসার আগেই কমিটিসহ, পরিষদ সদস্য ও সেক্রেটারী জেনারেলকে এড়িয়ে কার্যকরি পরিষদের নির্বাচনী তৎপরতা চালানোর চেষ্টা।

২. ২০১০সেশনের সেক্রেটারী জেনারেলকে পদত্যাগে বাধ্য করানো।

৩. বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সংগঠনকে সঠিক কোন গাইড করতে ব্যর্থ হওয়ার (মোবাইল বন্ধ রাখা, পরিষদের সাথে সমন্বয় না রাখা, জনশক্তি ও সংগঠনকে সঠিক দিক নির্দেশনা না দেয়া) প্রেক্ষিতে বর্তমানে তাঁর কার্যক্রমে সংগঠনের সমূহ  ক্ষতি হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

(৯) ধারা নং ৪১ মতে “কেন্দ্রীয় সভাপতি যদি স্বেচ্ছায় শরীয়তের স্পষ্ট বিধান লঙ্ঘন করেন অথবা তার কার্যক্রমে সংগঠনের তি হবার আশঙ্কা দেখা দেয় তাহলে তাকে পদচ্যুত করা যাবে।”

তিনি মিথ্যাচার (অনার্সে ফার্স্ট কাস ফার্স্ট না হয়েও বইয়ে ফার্স্ট ক্লাস লিখেছেন), অপবাদ আর অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে শরীয়তের যে সুস্পষ্ট লংঘন করেছেন তা সহজেই অনুমেয়। অন্যদিকে অভিযোগকারী সদস্যদের প্রলোভন দেখানো, সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে বাঁধাদান, সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতিদের ব্যবহার করে ভয়ভীতি প্রদর্শনমূলক কার্যাবলী সংগঠনকে ক্ষতির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে বলে আমরা মনে করি।

(১০) সংবিধানের ৪২নং ধারায় বলা হয়েছে “যদি কার্যকরী পরিষদের অধিকাংশ সদস্য কেন্দ্রীয় সভাপতির প্রতি অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেন, তাহলে এক মাসের মধ্যে পূর্ণ বিষয়টি সদস্যদের নিকট পেশ করতে হবে। অধিকাংশ সদস্য অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলে কেন্দ্রীয় সভাপতি পদচ্যুত হবেন। অধিকাংশ সদস্য সভাপতির সমর্থনে ভোট দিলে কার্যকরী পরিষদ পদচ্যুত হবেন এবং নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”


সংবিধানের ২২নং ধারায় কার্যকরী পরিষদের একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব বলা হয়েছে “ সামগ্রিকভাবে কার্যকরী পরিষদের ও ব্যক্তিগতভাবে এর সদস্যদের দায়িত্ব হচ্ছে নিজেদের তত্বাবধান, কেন্দ্রীয় সভাপতির তত্বাবধান, সংগঠনে ইসলামী নীতির অনুসৃতির তত্বাবধান, সংগঠনের কর্মসূচী বাস্তবায়নের তত্বাবধান ও পর্যবেক্ষণ, সংবিধান অনুসৃতির তত্বাবধান, সংগঠনের যে কোন ত্রুটি দূরীকরণ, সংগঠনের সামগ্রিক কাজের মৌলিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, কেন্দ্রীয় সভাপতিকে পরামর্শ দান, নিঃসংকোচে মত প্রকাশ এবং কার্যকরী পরিষদের অধিবেশনে নিয়মিত যোগদান অথবা অভিমত প্রেরণ।”

উপরোক্ত ধারা অনুসারে কার্যকরী পরিষদের একজন সদস্য হিসেবে সংগঠনের এই ক্রান্তিলগ্নে সময়োপযোগী ভূমিকা সদস্য শপথ ও কার্যকরী পরিষদের শপথের দাবী। এমতাবস্থায় সংগঠনকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা, সাংগঠনিক শৃংখলা ফিরিয়ে আনা এবং সংগঠনের গ্রহণযোগ্যতা সর্বমহলে রক্ষার স্বার্থে সংবিধানের ৪২নং ধারায় বর্ণিত কার্যকরী পরিষদকে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আমরা কার্যকরী পরিষদের সদস্যরা কেন্দ্রীয় সভাপতি জনাব রেজাউল করিমের উপর অনাস্থা প্রস্তাব পাশ করছি-

সংযুক্তি : পরিষদ সদস্যদের নাম ও স্বাক্ষর

অনুলিপি প্রদান :
১. প্রধান নির্বাচন কমিশনার
২. সহকারী নির্বাচন কমিশনার বৃন্দ
৩. পরিষদের সদস্যবৃন্দ

Sequences of facts of current situation in BICS : KAP members explanation (come to constitution)

Dear Brothers, As'salaamualikum. The internal situation become the public interest of Bangladesh. As you agree with us that BICS has protect thousands of young from misguided and show the enlighten way of Islam. But now BICS is under threat of destruction. So we urge the BICS's well wishers to raise the voice to comply with it constitutions and Shari'a. Before that we want to update you with the latest situations

You are aware that there is a crisis arose in BICS like 1982 which is very unfortunate. Now it is time to share how bad the situation is ! and bring out a peace full solution for BICS.


1. Crisis starts from the end of member conference and spread out to the all members joined in the conference 2010; the reason being-

2. Mr. Rezaul Karim Vai ( previous and newly elected president, who supposed to end up his studentship this year) has taken some decision in his own without give any refection of executive committee members suggestion.

3. 27 EC members out of 38 members ( excl. ex-cp 2 + Rezaul Karim) have raised several issue against Mr. Rezaul Karim Vai about ( which related to abuse of Funds, assets, power and over all his integrity and fairness) his activities in the previous years then it come to the light and out of EC.

4. Initially ex cps took the initiative to solve the problem (3 members committee from recent CP);

5. But it was not accepted to the members who raise the voice for integrity and transparency of rezaul Karim Vai, because all of them are coming from a certain university (RU) and there is highly likely bias will takes place.

6. So they went to the Ameer-e-Jamaat and he formed another independent committee with senior CP including our honourable election commissioner Jb. Nazir Ahmed.

7. They call the EC member to produce their allegation against Rezaul Karim Vai with evidence;

8. They ( 27 EC members) did so;

9. Then the committee called Mr. Rezaul Vai and his Supporters in front of the committee and place their argument but 3 times THEY deny to present.

10. On the other hand Jb. Nazir Ahmed became sick and the committee became inactive;

11. In the same time today the Secretary general Dr. Mamun VAI who was chosen by Rezaul Karim VAI has resigned due to undue appointment by Rezaul Karim vai ; as he realized in EC meeting.

12. Already ameer-e-jamaat said - ''Jamaat will not interfere in the shibir's activities'', they will be guided by their constitution but 2/3 Jamaat leader were violating this ethics.

13. This 95% true report. You may know more if you ask EC members what type of offers they have got from Rezaul & Cos. ( Job/ Money/ SG position etc)

14. Now Mr. Rezaul karim VAI sending the balot paper for new EC election which was suspended by the inquiry committe;

15. We agree Rezaul VAI was elected where he suposed to end up his studentship; he got married now his duty is to build up his family life why and who asking him to stay in shibir to serve their purpose. As shibir members shows honour as current cp by putting their Vote but Mr. Rezaul vai taking this as his opportunity serve his supporters in JAMAYAT.

16. Mr. Rezaul vai is trying to remove all meritorious brothers from shibir to full fill some's agenda;

17. if we allow him to carry the job in his own way it will be resulted very serious break down of the chain of command, inactiveness and demotivation to Islami Movement, ultimately destroy the future IM which awami league want to do.

18. But our main concern is- where is the source of the power of bro Mr. Rezaul Karim and he is waiting for green signal!!!!!!!!!??????

19. Who is he ( By the way he is the cousine of national bitraer Moin Uddun Ahmed Ex chief of Army) !!!!!!! Ignoring the 27 EC members out of 38 elected EC ( Excl ex-cp 2 + 1 Rezaul in the ex co )

20. NOW Shibir is in real Crisis ever that it born.

21. So borthers' come foreward and save shibir from any disputed personal.




The situation as below (latest update)




1. The independent enquiry committee being paralysed due to unfair interfere from few Jamaat leader;

2. During the inquiry bro Mr. Rezaul Karim should stop his regular activities due the unbiased inquire and he should come to the committee to explain himself;

3. But he denied them 3 time; and there is no report is published yet due to his non co-operation;

4. In the mean time he declared election for new EC with his short list of Chosen Member.( It is completely out of our constitutions);

5. In same time telephone calls are making to the all branches of Jamaat -e- Islami to pursue the vote to bro Rezaul Karim; ( it is not the Jamaat decision, this decision made by only one leader) which is also bending the constitutions;

6. It is also come to us from abroad that they are instructed by Jamaat (few leader) that do not hear the leaders just follow our instruction ( What is the sign of it???????)

7. Why Jamaat leaders are interfering all places; ( If it the decision from the surah of Jamaat we will follow them; if not we should think about it ??? whats going on?????)


8. Inquire committee didn't informed as well. Now Jam mat -e- Islami executive council id due in next day.

9. Actually Jamaat( A part of leaders) and Shibir CP (brother Rezaul ) are controlled by a syndicate;

10. On the other hand Rezaul Karim vai is calling to different branches and asking the members to vote on him if they don not agree to vote him, he (Rezaul) is instantly suspending their membership; Which is question of his ethics and constitutional policy about voting;


11.Dear brothers you will be shocked to hear that few Jamaat leader is also calling to different city ameer not to accept the leaving brothers ( Those are resigned and signing petision against Rezul for impeachment); it is really unfortunate that few ex cp come Jamaat leaders are influencing shibir and making barrier to exercises the BICS's constitution);

12. The present situation is over flowed by the traditional political practise in Bangladesh.

13. Dear brother pls pray to Allah and put your affords to save Jamaat an shibir from a organised syndicate.

Can you imagine HOW BAD THE SITUATION IS!!!!!!!!!!





What should we do???????

You may agree with us or not but you should do some this as Allah (SWT) gave you a'akal to think what going on !!!!!!!!!!!!

Need to Do:



* Call to Ameer -e- Jamaat or his Representatives and request to restore the brother hood and spirit of IM;

* Instantly suspended all activities by the name of Shibir and By current cp bro Rezaul until problem is solved;

* Expand the independent inquiry committee member by including ex-CP & EC members those are Lawyer, Barrister and Dene ale em to check the compliance of Shariah and BICS constitution.

* We will not compromise with shariah issue and bending the law of BICS Constitution.

* If needed turn back shibir to member conference 2009 and get a fresh start.

* Call all EC members in front of the committee to explain themselves and present the report to the Jamaat EC.

* Whoever prov en to guilty in Shibir and Jamaat to making this crisis they should be punished like sahabas whose are not joined Uhud war.

* Dear brothers we will not afford to ignore the situation any more, so raise your voice for justice and pure islamic movement.

May Allah accept all our afford and keep away from the syndicate. Do not listen to any one until the problem solved by complying Shariah and BICS constitution.



Ma'aslaam

Your beloved brothers

**

বিভিন্ন সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় ইসলামী ছাত্রশিবির সম্পর্কে প্রচারিত খবরের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সভাপতির বিবৃতিঃ

তারিখঃ ২৩/০২/২০১০

বিভিন্ন সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সম্পর্কে প্রচারিত খবরের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জনাব মুহাম্মাদ রেজাউল করিমের বিবৃতিঃ

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সংবিধান অনুযায়ী সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে এক বছরের জন্য কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধান অনুযায়ী ২০১০ কার্যকালের জন্য ১৮ জানুয়ারী সদস্যরা ভোট দিয়ে আমাকে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত করে। এরপর কার্যকরি পরিষদের সাথে পরামর্শ করে সংগঠনের সেক্রেটারী জেনারেল মনোনয়নের কাজ সম্পন্ন হয়। তারপর সদস্য শাখা ও সাথী শাখাসমূহের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

গত ৩০ জানুয়ারী ২০১০ কার্যকরি পরিষদের সভায় উদ্ভূত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ পূর্বক যথার্থ সমাধানের জন্য সুপারিশমালা প্রণয়নের দায়িত্ব দিয়ে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠিত হয়। এটাও সিদ্ধান্ত হয় যে, এখন থেকে সংগঠনের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

উক্ত সিদ্ধান্তের আলোকে সংগঠনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ও কার্যকরি পরিষদের নির্বাচনের প্রস্তুতি চলতে থাকে। এর মধ্যেই সরকার চিরুনি অভিযানের নামে সারা দেশে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওপর গ্রেফতার ও নির্মূল অভিযান শুরু করে। জামায়াত-শিবিরের প্রায় ৭ শতাধিক ভাইকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। প্রায় ৩ শত ভাইকে নেয়া হয় রিমান্ডে। ছাত্রশিবিরের সর্বপর্যায়ের জনশক্তিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হোস্টেল, ছাত্রাবাস ও মেস থেকে বিতাড়িত করা শুরু হয়, যা এখনও অব্যাহত আছে। ফলে সংগঠনের স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

সংবিধান অনুযায়ী কার্যকরি পরিষদ গঠিত না হওয়ায় সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল মনোনয়ন, পরিকল্পনা গ্রহণ ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনায় সমস্যা দেখা দেয়। এমতাবস্থায় সংগঠনের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে ২০১০ কার্যকালের জন্য কার্যকরি পরিষদ গঠনের লক্ষ্যে ২১-২-২০১০ তারিখে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। নির্বাচন চলাকালে ২২-২-২০১০ তারিখ গভীর রাতে ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় পরিবেশিত খবরে আমি জানতে পারি সেক্রেটারী জেনারেলসহ ২৪ জন কার্যকরি পরিষদ সদস্য পদত্যাগ করেছেন। মিডিয়ার মাধ্যমে এ খবর জেনে আমি অত্যন্ত বিস্মিত ও মর্মাহত হয়েছি।

প্রকৃত পক্ষে ৩০ জানুয়ারী সেক্রেটারী জেনারেল ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে আমার নিকট পদত্যাগ পত্র পেশ করেন। আমি তাকে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করি। কিন্তু তিনি দায়িত্ব পালন করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। অবশেষে আমি গত ২১-২-২০১০ তারিখে তার পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করি। সেই সাথে কার্যকরি পরিষদের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করি। পরিষদের নির্বাচন চলাকালে বিদায়ী পরিষদের কোন কার্যকারিতা থাকে না। ফলে পরিষদের সদস্য হিসেবে পদত্যাগেরও সুযোগ নেই। তদুপরি কেন্দ্রীয় সভাপতির নিকট পদত্যাগ পত্র পেশ না করে প্রচার মাধ্যমে তা পরিবেশন করা দুর্ভাগ্যজনক, অপ্রত্যাশিত, অনাকাঙ্খিত ও অসাংবিধানিক। উল্লেখ্য যে, ২৪ জন পদত্যাগ করেছেন মর্মে যে তথ্য পরিবেশিত হয়েছে তা সঠিক নয়। কাউকে সম্বোধন না করে-- ‘নি¤েœাক্ত স্বাক্ষরকারী আমরা পরিষদ সদস্যরা সংগঠনের পরিষদ সদস্য থেকে স্ব-জ্ঞানে পদত্যাগ করছি’ লিখে সাদা কাগজে ১৮ জন ভাই সই করেছেন বলে শুনেছি। আরও উল্লেখ্য যে, স্বাক্ষরকারী ১৮ জন ভাইয়ের মধ্যে ৯ জন ভাইয়ের স্বাভাবিক ছাত্রজীবন ইতিপূর্বেই শেষ হয়েছে। স্বাক্ষরকারী কয়েকজন ভাই স্বাক্ষর প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমে সহযোগিতা শুরু করেছেন।

ইসলামী ছাত্রশিবির একটি দ্বীনি সংগঠন। এখানে ব্যক্তির সংশোধনের প্রক্রিয়া ইসলাম সম্মতভাবে নিজ নিজ ফোরামে সম্পন্ন হয়ে থাকে। সে প্রক্রিয়ার বাইরে অসাংগঠনিক কোন পদক্ষেপ সংগঠনের পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বিঘিœত করতে পারে। আল্লাহর রহমেত ইসলামী ছাত্রশিবির তার সূচনালগ্ন থেকে বিগত ৩৩ বছর যাবত এ নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশের সচেতন মহলে শৃঙ্খলার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে।

যখন দেশে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নির্মূল করার চক্রান্ত চলছে তখন এ ঐতিহ্যবাহী শহিদী কাফেলার পবিত্র পরিবেশকে বিঘিœত ও আন্দোলনের স্বাভাবিক ধারাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, এমন ভূমিকা থেকে সকলেরই বিরত থাকা উচিত। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এ কাফেলার যাত্রা শুরু হয়েছে। তাই সংগঠনের সংবিধান, বিধি-বিধান এবং নীতিমালা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন সর্বস্তরের জনশক্তির পবিত্র ও ঈমানী দায়িত্ব। আল্লাহর কাছে জবাবদিহির অনুভূতি নিয়ে সে দায়িত্ব পালনের জন্য সর্বস্তরের জনশক্তিকে আমি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।



মুহাম্মাদ রেজাউল করিম
সভাপতি
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

ছাত্রত্ব খুঁজছে ছাত্রশিবিরের অছাত্র সেক্রেটারি

ছাত্র নন ছাত্রশিবিরের নতুন সেক্রেটারি জেনারেল ডা. ফখরুদ্দিন মানিক। সোমবার বিকেলে শীর্ষ নিউজ ডটকমের সঙ্গে এক সংক্ষিপ্ত আলাপে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন একথা। পরে সংগঠনের প্রচার সম্পাদকও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদে কোন অছাত্র থাকতে পারবে না। এ পরিস্থিতিতে তিনি দ্রুত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হয়ে ছাত্রত্ব জাহির করতে চাইছেন বলে জানা গেছে।

সোমবার রাজধানীর বড় মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তন অনুষ্ঠিত শিবিরের শাখা দায়িত্বশীলদের সমাবেশ শেষে এই অছাত্র শিবির নেতার সঙ্গে আলাপ হয় শীর্ষ নিউজ ডটকমের। মানিক জানান, তিনি রাজধানীর মিরপুরের সরকারি হোমিও মেডিকেল কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেন। এরপর বাংলাদেশ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেন। কবে নাগাদ এমবিএ পড়া শেষ করেছেন জানতে চাইলে এড়িয়ে যান তিনি। তবে অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি কোনো চাকরি করি না। ইবনে সিনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। প্রসঙ্গত, সমপ্রতি সেইভ শিবিরের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় যে, ইবনে সিনায় চাকরি করতেন ডা. ফখরুদ্দিন মানিক।

শিবির সেক্রেটারির কাছে তার সম্পর্কে আরো জানতে চাওয়া হলে তিনি তার মুখপাত্র হিসেবে সংগঠনের প্রচার সম্পাদক আতাউর রহমান সরকারকে দেখিয়ে দেন। তার কাছ থেকেই সব কিছু জানার অনুরোধ করেন তিনি।

পরে আতাউর জানান, সমপ্রতি এমবিএর ফলাফল হাতে পেয়েছেন শিবির সেক্রেটারি। শিগগির তিনি উচ্চতর ডিগ্রি লাভের জন্য কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হবেন। তবে বর্তমানে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তার ছাত্রত্ব নেই।

এদিকে শিবিরের সাবেক এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষ নিউজ ডটকমকে জানান, সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুয়ায়ী শিবিরের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের কেউ অছাত্র হতে পারবে না। শিবিরের বর্তমান সেক্রেটারি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নেতৃত্বে থাকতে হলে তাকে দ্রুত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে ছাত্রত্ব ফেরাতে হবে।

সেভ শিবিরের পর এবার এক্স শিবির

সেভ শিবিরের পর এবার এক্স শিবিরের ব্যানারে ইসলামী ছাত্র শিবিরের বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় সেভ শিবিরের স্টাইলেই ইংরেজি অক্ষরে বাংলা ভাষায় লেখা একটি বিবৃতি পাঠায় তারা। রাজধানীতে কর্মরত কয়েক শ সাংবাদিককে ই-বার্তার মাধ্যমে এ বিবৃতি পাঠানো হয়। এ বিবৃতিদাতারা নিজেদের শিবিরের প্রাক্তন সদস্য, সাথী ও কর্মী বলে দাবি করেছেন।

বিবৃতিতে তারা বলেন, শিবিরের বর্তমান দুরবস্থার জন্য জামায়াত দায়ী। শিবিরের পুরনো গৌরব ফিরিয়ে আনতে জামায়াতের হস্তক্ষ...েপ বন্ধের পাশাপাশি বর্তমান সভাপতিসহ পুরো পরিষদের পদত্যাগ দাবি করেন তারা। সেই সাথে তারা নতুন করে শিবিরের কার্যকরী পরিষদ নির্বাচনের দাবিও তোলেন।

এক্স শিবিরের বিবৃতিতে বলা হয়, তারা এসব বিষয় নিয়ে জামায়াত ও শিবিরের শীর্ষ নেতাদের সাথে একাধিকবার আলাপ করে কোন ফল না পেয়ে এ বিবৃতি পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন। যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গে তারা বলেন- প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীর বিচার হোক, সেটাই আমরা চাই।

এ প্রসঙ্গে শিবিরের প্রচার সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার শীর্ষ নিউজ ডটকমকে বলেন, এ এক্স শিবির বা সেভ শিবিরের সাথে শিবিরের কারো সম্পৃক্ততা নেই। আসলে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এসব ব্যানার ব্যবহার করে আমাদের ক্ষতি করতে চাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত শিবিরের ৩৩তম কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলনের পর থেকে সেভ শিবিরের ব্যানারে ই-বার্তার মাধ্যমে বিভিন্ন বিবৃতি পাঠানো শুরু হয়েছিল। শিবিরের বর্তমান নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল তারা। সেই সাথে শিবিরের উপর জামায়াতের অযাচিত হস্তক্ষেপের অভিযোগও তুলেছিল। এরই ধারাবাহিকতায় শিবিরের সেক্রেটারিসহ কার্যকরী পরিষদের একাংশের নেতৃবৃন্দ পদত্যাগ করেন।

এবার বরিশাল মেডিকেল সভাপতিসহ শিবিরের ৫ নেতার পদত্যাগ

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতিসহ পাঁচ নেতা পদত্যাগ করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ বিষয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পত্রিকা অফিসে পৌঁছে দেন কলেজ শাখা শিবিরের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় কোন্দল এবং ইসলামের আলোকে দলের দর্শন সঠিক নয় মনে করে কলেজ শিবিরের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ (শেষ বর্ষ) একই বর্ষের ছাত্র ও দলের সাথি আব্দুল্লাহ আল মামুন, হাসান মাহমুদ, গোলাম রসুল এবং রিজওয়ানউল্লাহ মাহদি একযোগে পদত্যাগ করেন। তাঁদের পদত্যাগপত্র মহানগর সভাপতির কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
পদত্যাগের কারণ জানতে চাইলে আবদুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমে যখন এই ছাত্রসংগঠনের সদস্য হই তখন এর আদর্শ ইসলাম অনুযায়ী সঠিক মনে হলেও দীর্ঘদিন ইসলামি পড়াশোনা ও জ্ঞানের আলোকে এই সংগঠনের মূল দর্শন আমার কাছে সঠিক নয় বলে মনে হয়েছে। ইসলামের সঙ্গে অনেক কিছুরই আমি মিল খুঁজে পাইনি। তাই সচেতনভাবেই ছাত্রশিবির থেকে পদত্যাগ করেছি।’ দলীয় কোন্দলের কারণে এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে শিবিরের ২৬ জন কেন্দ্রীয় নেতা একযোগে পদত্যাগ করেন।

বড় ধরনের অস্থিরতার মুখে ছাত্রশিবির

* জামায়াতের সেক্রেটারি আলী আহসানের হাত থেকে জামায়াতকে রৰা করার দাবি শিবিরের একটি অংশের
* জামায়াত নেতাদের বিরম্নদ্ধে দুনীতির অভিযোগ তাদের
* দুই ভাগে ভাগ হয়ে পড়েছে শিবিরও
* 'সেভ শিবির' ব্যানারে ইন্টারনেটে শিবির কমর্ীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান
স্টাফ রিপোর্টার ।। বড় ধরনের অস্থিরতার মুখে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়েতের ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবির। এতদিন অভ্যনত্মরীণ কোন্দলমুক্ত থাকলেও এবার সভাপতি ও সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়েছে মৌলবাদী ও উগ্রবাদী এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কেবল তাই নয় সমপ্রতি পুনর্নির্বাচিত সভাপতি রেজাউল করিম, জামায়েতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং ঢাকা মহানগর আমীর রফিকুল ইসলাম খানের বিরম্নদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠছেন শিবিরের একটি বৃহৎ অংশ। অনিয়ম দুর্নীতি প্রবেশ করানোর দায়ে পদত্যাগ এবং বিচার দাবি করেছেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে নেতাকর্মীরা 'সেভ শিবির'-এর ব্যানান থেকে তাদের। এই দাবিতে বিদ্রোহী এই গ্রম্নপ থেকে ছাত্র শিবিরের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যনত্ম সকল নেতাকর্মীকে সোচ্চার হওয়ার ডাক দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করে সেক্রেটারি জেনারেলের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বলেও দাবি করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছুদিন যাবত ভেতরে ভেতরে বিদ্রোহ থাকলেও গত ১৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু আনত্মর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেনের পর থেকে তা প্রকাশ্যে রূপ নিযেছে। ঐ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোঃ কামারম্নজ্জামান, ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমীর রফিকুল ইসলাম খানসহ জামায়েতের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা। প্রকাশ্যে বিরোধিতা করতে না পারলেও সভাপতি পদে রেজাউল করিমকে পুনর্নির্বাচিত করা এবং শিবিরের বাইরের লোক বিশেষত মুজাহিদ এবং রফিকুল ইসলাম খানের উপস্থিতি নিয়ে বেশ কয়েকদিন থেকেই ভেতরে ভেতরে বিদ্রোহ চলছিল। বড় কয়েকটি গ্রম্নপ থেকে গণপদত্যাগ এমনকি সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবাদ জানানোর মতো হুঁশিয়ারিও দেয় ই-মেইলসহ বিভিন্নভাবে। সোমবার রাতে শিবিরের বেশ কয়েকজন নেতা টেলিফোন করে তাদের প্রতিবাদের কথা জানালেন। তবে প্রত্যেকেই অনুরোধ করে বললেন, আন্দোলন চূড়ানত্ম পর্যায়ে যাওয়ার আগে কোনভাবেই নাম প্রকাশ করবেন না। শিবিরের বিদ্রোহী গ্রম্নপের এক সদস্য তার ৰোভ প্রকাশ করে বলেন, জামায়েতের ২/৩ দুর্নর্র্ীতিবাজ নেতার কারণে সুসংগঠিত শিবিরের আজ এই অবস্থা। কে কে? জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, জামায়েতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ এবং ঢাকা মহানগর আমীর রফিকুল ইসলামের কারণে সংগঠনটি ধ্বংসের মুখোমুখি। শিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক দুই নেতা (বর্তমানে কেন্দ্রীয়) জনকণ্ঠকে বলেন, আগে থেকেই জামায়েতের কয়েক নেতার অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন ছিল। তার ওপর সদস্য সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ৩ নেতা উপস্থিত থেকে থেকে তাদের মতামতের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। এর আগে আমীরের উপস্থিতি থাকলেও অন্য নেতাদের বা বহিরাগত কারও শিবিরের সম্মেলনে উপস্থিত থাকার ইতিহাস নেই। তারা জানান, ্আমীরসহ শীর্ষ নেতাদের জানাচ্ছেন না কেন? এমন প্রশ্ন করা হলে তাঁরা বলেন, এটা এমনই একটা সংগঠন যেখানে চাইলেই অন্য ছাত্র সংগঠনের মতো রাজপথে মিছিল করা যায় না। বড় ধরনের গ্রম্নপ নিয়ে প্রতিবাদ করতে না পারলে মৃতু্যর মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে তাকে।
এদিকে শিবিরের অস্থিরতা নিয়ে এই মুহূর্তে জটিলতার মুখে জামায়াত। কারণ আন্দোলনের অন্যতম শক্তি শিবিরকে ঐক্যবদ্ধ না রাখতে পারলে কোনভাবেই দলকে শক্ত অবস্থানে রাখ যাবে না বলে মনে করে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। শিবিরের নেতাদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন জামায়াত নেতারা। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে সোমবার রাতেও চলছে জরম্নরী বৈঠক। তবে সঙ্কট সমাধানে তেমন কিছু করা সম্ভব হয়নি বলে সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে সোমবার বিকেলে বিভিন্ন সাংবাদিকের ব্যক্তিগত মেইল নম্বরে একটি মেইল পাঠানো হয় সেভ শিবিরের ঠিকানা থেকে। যেখানে বলা হয়েছে, প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা-শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল ড. মামুন ভাই পদত্যাগ করেছেন। লাস্ট পরিষদ মিটিংয়ে মামুন ভাই পদত্যাগ করেছেন। তার পদত্যাগের কারণ হলো, বর্তমান প্রেসিডেন্ট রেজাউল করিমের দুর্নীতি, জামায়াত নেতা মুজাহিদ ও রফিকুল ইসলামসহ অনেকের নগ্ন অসাংবিধানিক হসত্মৰেপ। এই দুনর্ীতিবাজ প্রেসিডেমীর আন্ডারে সেক্রেটারি হয়ে তিনি কাজ করবেন না বলেই পদত্যাগ। সেভ শিবিরের পৰে বলা হয়, আমরা ৩ তারিখ শিবিরের জন্মদিনের আগেই ইসলামের দুশমন রেজাউল করিমের পদত্যাগ চাই। আমরা আলস্নাহ্্র কাছে দোয়া করি, আলস্নাহ তুমি রেজাউল করিম, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, রফিকুল ইসলাম খানসহ যারা শিবিরের ৰতি করল দুনিয়াতেই তাদের শাসত্মি দিও।
মেইলে সাংবাদিকদের কাছে এসব সংবাদ প্রকাশের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, সারাদেশের শিবিরের হাজার হাজার সমর্থক, কর্মী, সাথী, সদস্য আমাদের সঙ্গে আছে। আমরা আমাদের শিবিরকে ভালবাসী বলেই এখনও অন্য দলের মতো মারামারি পর্যায়ে যাই নাই। আমরা মনে করি সুষ্ঠুভাবেই সঙ্কটের সমাধান হবে। তবে আমাদের অধিকাংশ মানুষের মতে সমাধান হলো, একমাত্র রেজাউল করিমের পদত্যাগই শিবিরকে বাঁচাতে পারে। আমরা রেজাউল করিমের পদত্যাগ চাই। নতুন প্রেসিডেন্ট চাই। আলস্নাহ হাফেজ। সব শেষে-প্রেরক হিসেবে বলা হয়ছে-শিবির সাপোর্টার্স টিম।
পুরো বিষয় নিয়ে বিকেলে শিবিরের বর্তমান ও বিদায়ী সভাপতি, সেক্রেটারিদের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও কেউ মোবাইল রিসিভ করেননি। তবে রাত সাড়ে ৭টার দিকে সভাপতি রেজাউল করিম মোবাইল রিসিভ করলেও তিনি বলেন, আমি একটা মিটিংয়ে। এক মিনিট সময় হবে? একটা ছোট প্রশ্ন ছিল। আপনাদের সেক্রেটারি কি পদত্যাগ করেছেন? তার উত্তর ছিল_ না, পদত্যাগ করেননি।

আবার বিদ্রোহ শিবিরে, এবারও মুজাহিদকে প্রতিরোধের ডাক

গণপদত্যাগের মধ্যে গঠনতন্ত্র বাদ দিয়ে ইচ্ছেমতো কমিটি গঠনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বিদ্রোহের মুখে পড়েছে শিবিরের নতুন সেক্রেটারিসহ কার্যকরী পরিষদ। কমিটিকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক অভিহিত করে তাকে প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছেন বিদ্রোহীরা। শিবিরের কর্মী, সমর্থক, সাথী ও সদস্যরা একই সঙ্গে দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার দায়ে জামায়াত নেতা মুজাহিদ, রফিকুল ইসলাম খান, নুরম্নল ইসলাম বুলবুল এবং শিবির সভাপতি রেজাউল করিমকে দেশব্যাপী প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন। 'সেভ শিবির' ব্যানারে আন্দোলনরত এই বিদ্রোহীদের ঘোষণা, সারাদেশে নির্বাচনের নামে হয়েছে প্রহসন। রেজাউল করিমসহ পুরো পরিষদ বাতিল করে ভোটের মাধ্যমে নতুন সভাপতি ও সেক্রেটারি নির্বাচন করতে হবে। অন্যথায় প্রতিরোধ অনিবার্য। বিদ্রোহ সামাল দেয়ার আশায় তড়িঘড়ি করে শনিবার ছুটির দিনেই নতুন কার্যকরী পরিষদ গঠন করেছিল শিবির। পদত্যাগী নেতা ডা. আব্দুলস্নাহ আল মামুনকে বাদ দিয়ে ডা. ফখরম্নদ্দিন মানিককে করা হয়েছে নতুন সেক্রেটারি। বিদ্রোহে অংশ নেয়ার অভিযোগে বাদ দেয়া হয়েছে কার্যকরী পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী ১০ শিবির নেতাকে। জানা গেছে, সমপ্রতি শিবিরের সেক্রেটারিসহ কার্যকরী পরিষদের ২৬ সদস্যের একযোগে পদত্যাগের পর জামায়েত নেতারা সঙ্কট সমাধানে দ্রম্নত কমিটি গোছানোর উদ্যোগ নেয়। জামায়েতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের বিরম্নদ্ধে শিবিরে ব্যাপক ৰোভ ছড়িয়ে পড়ায় দফায় দফায় বৈঠক করেন জামায়েত আমির মতিউর রহমান নিজামী। কিন্তু শিবিরের বিদ্রোহের মধ্যেও নিজেদের শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চালিয়ে যান আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, জামায়েতের ঢাকা মহানগর আমির রফিকুল ইসলাম খান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল নুরম্নল ইসলাম বুলবুল। এই অবস্থায় গত বৃহস্পতিবারই শিবিরের বিদ্রোহীরা মেইল ও ফ্যাক্স যোগে আশঙ্কা প্রকাশ করেন, দেশব্যাপী কোথায় কিভাবে নির্বাচন হয়েছে তার কোন খবর নেই। কারা ভোট দিয়েছে তারও কোন হদিস নেই। কিন্তু তার পরেও নতুন কার্যকরী পরিষদ গঠনের কাজ চলছে। বিদ্রোহীরা বলেন, সভাপতি হিসেবে জামায়েতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের আশীর্বাদপুষ্ট রেজাউল করিমকেই রাখা হবে। সারাদেশে কার্যকরী পরিষদ (কাপ) নির্বাচনে অংশ নেয়নি অধিকাংশ সদস্য। তার পরেও সভাপতি রেজাউল করিম তাঁর ইচ্ছেমতো কার্যকরী পরিষদ (কাপ) গঠন করতে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার ছুটির দিনেই প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সেক্রেটারি হিসেবে শিবিরের ঢাকা মহানগর পূর্ব, পশ্চিম ও দৰিণের সভাপতি ডা. ফখরম্নদ্দিন মানিককে সেক্রেটারি করে নতুন কার্যকরী পরিষদ গঠনের কথা জানানো হয়। একই সঙ্গে ২০১০ কর্মকালের জন্য সংগঠনের ১১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় সেক্রেটারিয়েটও ঘোষণা করা হয়। শিবিরের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিকেলে কার্যকরী পরিষদ ঘোষণার আগে সকালেই কার্যকরী পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত ১০ বিদ্রোহী নেতাকে সংগঠন থেকে অপসারণের সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়। পরিষদের সাধারণ অধিবেশনে নেয়া হয় এই সিদ্ধানত্ম। যদিও সদস্যরা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে সংবিধান অনিুযায়ী কাউকে বাদ দেয়ার সুযোগ নেই। শিবির সভাপতি মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরীর আমির রফিকুল ইসলাম খান ও সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। সূত্র জানিয়েছে অপসারিত নেতাদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে তারা হলেন- জুবায়ের আহমেদ ভূঁইয়া, নাসির আহমেদ মোলস্না, নজরম্নল ইসলাম, আনিসুর রহমান, জাকির হোসাইন, আসাদ উদ্দিন, শাহরিয়ার আলম সিফাত, ডা. শহিদুলাহ শরিফ, শামসুদ্দিন। নির্বাচিত নেতাদের অপসারণের খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, ভোট গণনা শেষ হলেও বিদ্রোহীরা অনেকে নির্বাচিত হয়ে আসায় ফল ঘোষণা করেনি সংগঠনটি। শিবিরের বিদ্রোহী নেতাদের ব্যাপারে সিদ্ধানত্ম নিতে বৃহস্পতিবার রাতেই রাজধানীর বড় মগবাজারের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সভায় মিলিত হয়েছিলেন জামায়াতের সর্বোচ্চ ফোরাম নির্বাহী পরিষদের সদস্যরা। ঐ বৈঠক কোন সিদ্ধানত্ম ছাড়াই শেষ হয়। এরপর শুক্রবার পুনরায় বৈঠকে বসেন তাঁরা। বৈঠকে মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ নির্বাহী পরিষদের ১৬ সদস্যের অধিকাংশই উপস্থিত ছিলেন। ঐ সভার সিদ্ধানত্মের পর কার্যকরী পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করে শিবির। শিবিরের ১১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় সেক্রেটারিয়েট গঠন করেছে শিবির। এখানেও এসেছে জামায়েতের ৩ শীর্ষ নেতার আশীর্বাদপুষ্ট নেতারাই।
শনিবার শিবিরের নতুন সেক্রেটারিসহ পরিষদ ঘোষণার পর পরই পুরো বিষয়টি নিয়ে অসনত্মোষ ছড়িয়ে পড়েছে শিবিরের কর্মী, সমর্থক, সাথী ও সদস্যদের মাঝে।

শিবিরে গণপদত্যাগ, দায়ী করা হচ্ছে মুজাহিদ-রেজাউলকে

অন্তঃকোন্দলে পুড়ছে ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনটির ৩২ বছরের ইতিহাসে কার্যকরী পরিষদের সদস্যদের গণপদত্যাগের এমন ঘটনা দ্বিতীয়বার ঘটল। সংগঠনের প্রতি চরম দায়বদ্ধ শিবিরের নেতারা সাধারণত কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বাইরে যান না। কিন্তু এবার কার্যকরী পরিষদের ২৬ সদস্য একযোগে পদত্যাগ করলেন। এ ছাড়া সারা দেশে আরও ১৯৪ জন শিবির সদস্য (সর্বোচ্চ পদ) গত দুই দিনে পদত্যাগ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে চরম বিব্রত জামায়াত ও শিবিরের নেতারা।
পদত্যাগী একাধিক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, গণপদত্যাগের একটি কারণ বর্তমান সভাপতির স্বেচ্ছাচারিতা। এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে হত্যার ঘটনায় শিবিরের জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি কার্যকরী পরিষদের অধিকাংশ নেতা। এমনকি বিষয়টি তাঁরা জানতেনই না। তাঁদের অভিযোগ, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের পরামর্শে শিবিরের বর্তমান সভাপতি রেজাউল করিম এ ঘটনার সঙ্গে জড়ান। মুজাহিদসহ জামায়াতের কয়েকজন নেতা শিবিরকে সাম্প্রতিক সময়ে ইচ্ছেমতো ব্যবহার করছিলেন বলেও তাঁরা অভিযোগ করেন।
শিবিরের নেতাদের গণপদত্যাগের বিষয়ে গতকাল জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কোনো মন্তব্য নেই। এ বিষয়ে কথা বলতে আলী আহসান মুজাহিদের ফোনে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, তিনি সভায় আছেন। কথা বলতে পারবেন না।
ছাত্রশিবিরের পদত্যাগী সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে সংগঠন চলছিল না বলেই আমি ব্যক্তিগতভাবে পদত্যাগ করেছি। এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত কারণ। কিন্তু অন্যরা কেন পদত্যাগ করল, তা আমার জানা নেই।’
ছাত্রশিবিরের কার্যকরী পরিষদের মোট সদস্য ৪১। এর মধ্যে ২৬ জনই পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ এই সদস্যরা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতিকে ইমপিচ (অভিশংসন) না করে কেন একযোগে পদত্যাগ করলেন? বিষয়টি সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হলে পদত্যাগী তিন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা জামায়াতের নেতাদের বিষয়টি জানিয়েছিলেন; কিন্তু নেতারা তা শোনেননি। বাধ্য হয়ে তাঁরা সরে গেছেন।
আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, গত ২১ জানুয়ারি পদত্যাগ করেন তিনি। কিন্তু বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন। কারণ তখন পত্রটি কেন্দ্রীয় কমিটি গ্রহণ করতে রাজি হয়নি। তবে সোমবার রাতে পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়। মামুনের পদত্যাগের পর অন্য ২৫ জন পদত্যাগ করেন।
একটি সূত্র নিশ্চিত করে বলেছে, ৪১ জনের মধ্যে বর্তমানে ঢাকা মহানগরের দুজন, বরিশালের একজন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজনসহ মোট ছয়জন বাদে বাকি সবাই পদত্যাগ করেছেন। তবে এরই মধ্যে পদত্যাগী নেতাদের স্থলে অন্যদের নির্বাচিত করা হয়েছে। এখন সাধারণ সম্পাদক ঠিক করা হচ্ছে। সেটি হয়ে গেলেই নতুন কমিটির কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নিয়েই পদত্যাগ করেছেন কি না—জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সভাপতি শামসুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম থেকে সেটি বলব না। তবে সংগঠনে সমস্যা ছিল বলেই পদত্যাগ করেছি। কিন্তু সংগঠনের প্রতি আমাদের ভালোবাসা কারও চেয়ে কম নয়।’
পদত্যাগের বিষয়টি নিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের তিন শীর্ষ নেতার সঙ্গে গতকাল কথা হয়। তাঁরা জানান, বর্তমান সভাপতি রেজাউল করিম শিবিরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিশির মুহাম্মদ মুনিরকে একক সিদ্ধান্তে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেন। তখন থেকেই কার্যকরী পরিষদের নেতারা তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এ ছাড়া গঠনতন্ত্র ভেঙে একক সিদ্ধান্তে তিনি কার্যকরী পরিষদের এক-তৃতীয়াংশ সদস্য মনোনয়ন দেন। এ নিয়েও অসন্তোষ ছিল।
একাধিক নেতা জানান, রেজাউলের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ শুরু হয় গত বছরের শেষ থেকেই। কার্যকরী পরিষদ তাঁকে এসব বিষয়ে প্রশ্ন করলেও তিনি কোনো সদুত্তর দেননি। এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। কমিটি তদন্ত করে বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা পায়। কমিটি রেজাউলকে একাধিকবার ডাকলেও তিনি যাননি।
শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নেতা বলেন, নিজের সমস্যা বুঝতে পেরে রেজাউল জামায়াতের নেতা মুজাহিদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর মুজাহিদের পরামর্শে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মামুনকে কার্যকরী পরিষদের বৈঠক ডাকার নির্দেশ দেন রেজাউল। কিন্তু মামুন সেটি করতে রাজি হননি। এ ঘটনার পর রেজাউল সাধারণ সম্পাদক মামুনকে বলেন, ‘আপনার আর সংগঠনের দায়িত্ব পালনের দরকার নেই।’
পদত্যাগী নেতারা জানান, এ পরিস্থিতিতে সোমবার বিকেল চারটায় মামুনসহ ২৫ নেতা নিজামীর সঙ্গে দেখা করতে যান। কিন্তু রাত আটটা পর্যন্ত তাঁদের বসিয়ে রাখা হয়। এরপর নিজামী এসে তাঁদের বলেন, ‘আপনারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। রেজাউল যা করছে, সেটাই ঠিক। আপনারা মুজাহিদসহ জামায়াতের বড় বড় লিডারদের গ্রেপ্তারের জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত শিবিরের এক নেতা জানান, এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে কার্যকরী পরিষদের নেতারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এর পরই তাঁরা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।
সার্বিক বিষয় নিয়ে শিবিরের সভাপতি রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে শিবিরের কার্যকরী পরিষদের সম্পাদক দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী প্রথম আলোকে বলেন, একযোগে এভাবে তাঁদের পদত্যাগের বিষয়টি দুঃখজনক। তবে সংগঠন তার গতিতেই চলবে। এখন কার্যকরী পরিষদের জরুরি বৈঠক চলছে। বুধবার বৈঠক শেষ হবে। এরপর নতুন নেতাদের নাম সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হবে।
সভাপতিকে বহিষ্কারের দাবি: ‘সেভ দ্য শিবির’ নামে একটি সমর্থক গোষ্ঠী গত রাতে ই-মেইল পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যে কার্যকরী পরিষদের ২৬ নেতা পদত্যাগ করেছেন। এভাবে চললে সারা দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেতারা পদত্যাগ করবেন। শিবিরকে বাঁচাতে রেজাউল করিমকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করার দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে আলী আহসান মুজাহিদসহ কয়েকজন জামায়াত নেতার বিচার দাবি করা হয়।
সভাপতির বিবৃতি: গতকাল পাঠানো এক বিবৃতিতে রেজাউল করিম বলেছেন, টেলিভিশনের মাধ্যমে তিনি প্রথম জানতে পারেন, সাধারণ সম্পাদকসহ ২৪ জন পদত্যাগ করেছেন। কেন্দ্রীয় সভাপতির কাছে পদত্যাগপত্র না দিয়ে এভাবে প্রচারমাধ্যমে পরিবেশন করা দুর্ভাগ্যজনক, অপ্রত্যাশিত, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অসাংবিধানিক। আর যাঁরা পদত্যাগ করেছেন, তাঁদের অনেকের ছাত্রজীবন আগেই শেষ হয়েছে। তবে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে কয়েকজন সাংগঠনিক কার্যক্রমে সহযোগিতা করতে শুরু করেছেন।
শরিফুল হাসান
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ২৪, ২০১০

শিবিরে গণপদত্যাগ, নতুন কমিটি গঠনে দফায় দফায় বৈঠক

http://www.rtnn.net/details.php?id=22073&p=1&s=5 ঢাকা, ২৩ ফেব্রুয়ারি (আরটিএনএন ডটনেট)-- বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. আব্দুল্লাহ-আল মামুনসহ কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের ২৫ নেতা পদত্যাগ করেছেন।কেন্দ্রীয় এসব নেতাদের পদত্যাগের সূত্র ধরে সারাদেশে শিবিরের সর্বোচ্চ পদ'সদস্য'দের অনেকেই পদত্যাগ করছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
একান্তই ব্যক্তিগত কারণে এ পদত্যাগ জানিয়ে আব্দুল্লাহ-আল মামুন সাংবাদিকদের জানান, 'আমি আগেই পদত্যাগ করেছি। গত পরশু (শনিবার) আমার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে।' তিনি বলেন, 'অন্যরা (বাকি ২৪ জন) আজ (সোমবার ) পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছে বলে শুনেছি।’

পদত্যাগ পত্রে ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জের ধরেই এ গণপদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। এমনিতেই গত ১৮ জানুয়ারি শিবিরের ৩৩তম কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলনের পরই সভাপতি ও সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল শিবির নেতা-কর্মীরা। উপরন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মী হত্যার ঘটনার পর দেশব্যাপী জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে ওঠে।

পদত্যাগী নেতাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- অর্থ সম্পাদক আব্দুল জব্বার খান, অফিস সম্পাদক আহমেদ জাহেদুল আনোয়ার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শাহ মো. ফয়লাম বিন রহমান, বিতর্ক বিষয়ক সম্পাদক আহমেদ শিহাবুল্লাহ, প্রচার সম্পাদক গোলাম মাওলা শিমুল, ঢাকা মহানগর (পূর্ব) সভাপতি মইন উদ্দিন, ঢাকা মহানগর (পশ্চিম) সভাপতি মাকসুদুর রহমান,  পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, চট্টগ্রাম মহানগর (উত্তর) সভাপতি মোহাম্মদ কলিমুল্লাহ ও কার্যকরি পরিষদ সদস্য ডা. শহীদুল্লাহ শরীফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি আনিসুর রহমান।

জানা গেছে, শিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ পুনর্গঠন করা হচ্ছে। আজকের মধ্যেই নতুন কমিটি ঘোষণা করতে জামায়াত নেতারাসহ শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে, শিবিরের গঠনতন্ত্র অনুযায়ি 'সদস্য'দের প্রত্যক্ষ ভোটে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য নির্বাচনের যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তাতে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়বে বলে অনেকেই জানিয়েছেন।

শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেলসহ ২৫ নেতার পদত্যাগ

Tue 23 Feb 2010
ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ ২৫ সদস্য পদত্যাগ করেছেন। এর মধ্যে মামুন ছাড়া ২৪ জনই গতকাল একযোগে পদত্যাগ করেছেন। শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসংখ্যা ৪১। এক সপ্তাহে আগে ডা. মামুন সংগঠনের সভাপতি রেজাউল করিমের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি তা গ্রহণ করা হয়েছে বলে তাঁকে জানানো হয়।
গতকাল রাতে কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। সেই বৈঠকেই কেন্দ্রীয় কমিটির ২৪ জন সদস্য পদত্যাগপত্র জমা দেন। তবে তাঁদের নাম জানা যায়নি।
পদত্যাগী সেক্রেটারি জেনারেল ডা. আবদুল্লাহ-আল মামুন গতকাল সোমবার রাতে কালের কণ্ঠের কাছে তাঁর পদত্যাগের কথা স্বীকার করেন। নির্বাচিত হয়ে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারাই তাঁর পদত্যাগের কারণ বলে তিনি জানান। তাহলে কি শিবির দুই ভাগ হয়ে গেল_এ রকম এক প্রশ্নের জবাবে মামুন বলেন, এখন নতুন করে কেন্দ্রীয় পরিষদ গঠন করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলনে মো. রেজাউল করিম সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে সদস্যদের পরামর্শে ডা. আবদুল্লাহ-আল মামুনকে সেক্রেটারি জেনারেল মনোনয়ন দেন তিনি। রেজাউল দ্বিতীয় মেয়াদে শিবিরের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় একটি অংশের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়। একই সঙ্গে শিবিরের বিদায়ী সেক্রেটারি শিশির মো. মনিরকে নতুন কমিটিতে না রাখায় ওই অংশটি ক্ষুব্ধ হয়। তারা 'সেভ শিবির' শিরোনামে পাঠানো ই-মেইল বার্তায় সভাপতি রেজাউলের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ আনে। এই ই-মেইল পাঠানো হয় বিভিন্ন মিডিয়ায়।
পরে এসব অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির অধ্যাপক এ কে এম নাজির আহমেদকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। তবে কমিটির পক্ষ থেকে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করা হয়। এ নিয়ে শিবিরের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়।

শিবিরের দলছুটদের ফেরাতে ফল ঘোষণায় কালক্ষেপণ

২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর দুই দিন পার হয়ে গেলেও ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। এর আগে শিবির সভাপতি মুহাম্মদ রেজাউল করিম কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, শুক্রবার ফল প্রকাশ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নতুন কার্যকরী পরিষদের নাম প্রকাশের প্রতিক্রিয়ায় দলছুটরা যেন আবার কোনো অঘটন ঘটাতে না পারে, সেজন্য সময়ক্ষেপণ করে বিদ্রোহীদের দলে ফেরানোর চেষ্টা চলছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিদ্রোহীদের কয়েকজন ফিরে এলেও পদত্যাগী সেক্রেটারি জেনারেল ডা. আবদুল্লাহ আল মামুনসহ সাতজন এখনো অনমনীয়। জানা গেছে, ওই ক'জনকে ফিরিয়ে নিতে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্বেও দ্বিমত আছে। যাঁদের ঘিরে দ্বিমত, তাঁদের মধ্যে সেক্রেটারি জেনারেল ডা. মামুন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক শাহ মো. ফয়সাল ও প্রচার সম্পাদক গোলাম মাওলা শিমুল উল্লেখযোগ্য।
ডা. মামুনের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, তিনি আর শিবিরের সঙ্গে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নিজের পেশায় মনোযোগী হবেন তিনি। তবে যাঁকে কেন্দ্র করে শিবিরের এই সংকট, সেই বিদায়ী সেক্রেটারি জেনারেল শিশির মোহাম্মদ মনির জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক ফরম পূরণ করেছেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেও শিবির সভাপতিকে পাওয়া যায়নি। তবে শিবিরের কেন্দ্রীয় স্কুল কার্যক্রম সম্পাদক আতিকুর রহমান সরকার বলেন, 'প্রস্তুতির অভাবে ঘোষণা দেওয়া সম্ভব হয়নি।' তবে তিনি ভোট গণনা শেষ হয়েছে বলে প্রতিবেদককে জানান। ভোট গণনার পরও ফল ঘোষণায় বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে আতিকুর রহমান বলেন, 'কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত পরিষদ সদস্যদের ফল জানাবেন, নতুন সদস্য মনোনীত করে তাঁদের শপথ করাবেন। এর পর পরিষদের অধিবেশনে নতুন সেক্রেটারি জেনারেল মনোনয়ন ও তাঁদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করবেন। সব কাজ একসঙ্গে করতেই সময় লাগছে। দু-একদিনের মধ্যে কমিটি ঘোষণা হতে পারে।' এদিকে বিদ্রোহী অংশটি গত দুই দিন ধরে মোবাইল বন্ধ রেখেছে।

প্রশ্ন শিবির সভাপতিকে নিয়ে

ইসলামী ছাত্রশিবিরের নবনির্বাচিত সভাপতি মুহাম্মদ রেজাউল করিমের নেতৃত্বে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সংগঠনের বিক্ষুব্ধ একটি অংশ। 'সেভ শিবির' শিরোনামে একটি ই-মেইলবার্তায় তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থার কথা জানানো হয়।
'আমরা বিবাহিত প্রেসিডেন্ট চাই না। আমরা চাই শিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও মেডিক্যাল থেকে কাউকে প্রেসিডেন্ট করুক। জামায়াত ষড়যন্ত্র করে বিশেষ করে, মুজাহিদ (আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ) শিশির মনিরকে সরিয়ে দিয়ে বিবাহিত রেজাউলকে রেখে দিয়েছে। সময় থাকতে রক্ষা করুন প্রিয় সংগঠন শিবিরকে।' প্রতিবেদকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো ই-মেইলবার্তায় এসব কথা বলা হয়। এতে শিবির সভাপতির বিরুদ্ধে সংগঠনের অর্থের অপচয় এবং পিএইচডিতে নকলেরও অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগ সম্পর্কে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ বলেন, 'ছাত্রশিবির একটি স্বতন্ত্র সংগঠন। তারা নিজেরাই তাদের নেতৃত্ব ঠিক করে। এখানে আমার বা জামায়াতের কারো হস্তক্ষেপের সুযোগই নেই।'
গত ১৮ জাুনয়ারি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সদস্যদের গোপন ভোটে মুহাম্মদ রেজাউল করিম দ্বিতীয় মেয়াদে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন। অন্যদিকে শিশির মোহাম্মদ মনির সেক্রেটারি জেনারেল পদ থেকে বাদ পড়েন। তাঁর জায়গায় নতুন সেক্রেটারি মনোনীত হন ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন। অনেকেরই ধারণা ছিল, শিশির মনিরই সভাপতি হচ্ছেন।
কিন্তু শিশির বাদ পড়ায় শিবিরের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়। কিন্তু নেতৃত্ব নিয়ে সংগঠনে বাদানুবাদের চর্চা না থাকায় বিষয়টি দৃশ্যমান হয়নি। তবে বিক্ষুব্ধ অংশটি শিবির সভাপতি রেজাউল করিমকে নিয়ে কয়েকটি নৈতিক প্রশ্ন তোলে। তাতে শিবির সভাপতির লেখা দুটি গ্রন্থ রচনার স্বকীয়তা ও প্রকাশনার খরচে অস্বচ্ছতার অভিযোগ তোলা হয়। সংগঠনের বায়তুল মাল (কোষাগার) থেকে তিনি প্রকাশনার খরচ নির্বাহ করেন বলে দাবি করা হয়।
ই-মেইলবার্তায় আরো অভিযোগ করা হয়, সংগঠনের টাকায় শিবির সভাপতি কলাবাগানে তাঁর নতুুন ভাড়া বাসায় দেড় লাখ টাকার আসবাবপত্র কেনেন। শিবির সভাপতির পিএইচডি অধ্যায়নেও নকলের অভিযোগ তোলা হয়।
জানা গেছে, ছাত্রশিবিরের সভাপতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে 'ইসলামী সংস্কৃতির' ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন। সম্প্রতি তিনি 'জাতীয় জীবনে মূল্যবোধের অবক্ষয়' ও 'সংস্কারের রাজনীতি নয়, রাজনীতির সংস্কার' শীর্ষক দুটি বই লেখেন। বই দুটি প্রকাশ করেছে মগবাজারের প্রফেসর্স বুক কর্নার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ রেজাউল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এ ধরনের একটি খবর আমিও পেয়েছি। কারা করেছে, তা খোঁজার চেষ্টা করছি।'
অভিযোগের 'সবটাই মিথ্যা' দাবি করে রেজাউল করিম বলেন, 'আমি বিয়ে করেছি তা ঠিক। কিন্তু বাসার ফার্নিচার কেনায় আমার পরিবারের সদস্যরা সাপোর্ট দিয়েছে।'
রেজাউল করিম আরো বলেন, 'আমার বই দুটি প্রকাশ করেছে প্রফেসর্স বুক কর্নার। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন, ওদের টাকায় বই বের হয়েছে। এমনকি ওরা আমাকে কিছু টাকাও দেবে বলেছে।'
ই-মেইলবার্তার খবর জানিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ছাত্রশিবিরের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল শিশির মোহাম্মদ মনির বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, 'তাই নাকি! আয় হায়রে... এগুলোর কোনো সত্যতা নেই। আমি নিশ্চিত, গণ্ডগোল বাধানোর জন্য কেউ কনসপেরেসি করছে। আমি এখনই প্রেসিডেন্টকে ফোন করছি।' ছাত্রশিবিরে এ ধরনের প্র্যাকটিস নেই বলে শিশির জানান।
সূত্র জানিয়েছে, ই-মেইলবার্তাটি নিয়ে ছাত্রশিবিরের ভেতরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বার্তাটি কিভাবে, কোথা থেকে ছাড়া হয়েছে, তা জানতে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ওই সূত্র জানিয়েছে, মুহাম্মদ রেজাউল করিমসহ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ২৩ জন শিবিরের সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন। এর মধ্যে মাত্র ছয়জন সেক্রেটারি জেনারেল পদ থেকে বিদায় নিয়েছেন, তাঁরা সভাপতির দায়িত্ব পাননি।
শিবির একটি ক্যাডারভিত্তিক সংগঠন। এর নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দলের কোনো অভিযোগ সাধারণত ওঠে না।

সিলেট মহানগর ও জেলা নেতাদের গণপদত্যাগ!

জামায়াতে ইসলামীর আদর্শিক ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরে অভ্যন্তরীণ কোন্দল আবারও মাথাচাড়া দিয়েছে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়িয়ে সিলেট মহানগর ও জেলা কমিটির উল্লেখযোগ্য-সংখ্যক নেতা ঈদুল ফিতরের আগে একযোগে পদত্যাগ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরও কার্যত কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে নেই। গুরুত্বপূর্ণ দুটি শাখার নেতারা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ওপর ভীষণ ক্ষুব্ধ। সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি শাহরিয়ার আলম শিপার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আনিসুর রহমান ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মুহাম্মদ শামসুদ্দিন আহমেদ গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করেছিলেন।
জানা গেছে, ঈদুল ফিতরের আগে সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতির সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ান শিবিরের সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি শাহরিয়ার আলম শিপার। একপর্যায়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি শিপারকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহারের কথা জানিয়ে সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মুফিককে দায়িত্ব নিতে বলেন। কিন্তু মুফিক এ প্রক্রিয়ায় সভাপতির দায়িত্ব নিতে অনীহা প্রকাশ করেন।
এদিকে কেন্দ্রীয় সভাপতির এই পদক্ষেপকে অসাংগঠনিক আখ্যা দিয়ে শাহরিয়ার আলম শিপার দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেন। তাঁকে অনুসরণ করে মহানগর (উত্তর-দক্ষিণ) ও বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন জেলার সভাপতি-সেক্রেটারিসহ অধিকাংশ সদস্য একযোগে পদত্যাগ করেন। এ অবস্থায় শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির ও ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি অ্যাডভোকেট এহছানুল মাহবুব জুবায়েরের দ্বারস্থ হন। পরে তাঁর মধ্যস্থতায় পদত্যাগীদের নিবৃত্ত করে গত রবিবার বিশেষ সদস্য সম্মেলন আহ্বান করে ২০১০ সেশনের বাকি সময়ের জন্য শফিকুল ইসলাম মুফিককে সভাপতি ও মাহমুদুর রহমান দেলোয়ারকে সেক্রেটারির দায়িত্ব দেওয়া হয়। শিবির সভাপতি মুহাম্মদ রেজাউল করিম বিশেষ সদস্য সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল ডা. ফখরুদ্দিন মানিক। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন মহানগর জামায়াতের আমির এহছানুল মাহবুব জুবায়ের।
গত বছরের ১৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলনে মুহাম্মদ রেজাউল করিম দ্বিতীয়বার সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর শিশির মোহাম্মদ মনির সেক্রেটারি জেনারেল পদ থেকে বাদ পড়লে শিবিরের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এর রেশ ধরে ওই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি শিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরীসহ ১৮ জন কেন্দ্রীয় পরিষদ (কাপ) সদস্য একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিয়ে একযোগে পদত্যাগ করেন। অনেকের ধারণা, বিক্ষুব্ধ ওই অংশটি পরদিন 'সেভ শিবির' শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিবির সভাপতির বিরুদ্ধে সংগঠনের ঐতিহ্য ভেঙে বিয়ে করাসহ কিছু দুর্নীতি ও অনৈতিকতার প্রশ্ন তুলে ই-মেইল বার্তা পাঠায়।
কিন্তু পদত্যাগী নেতাদের অনেকে গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত কার্যকরী পরিষদের নির্বাচনে জয়ী হলে অভ্যন্তরীণ বিবাদের রেশ রয়েই যায়। কার্যকরী পরিষদের নির্বাচনে ৯ জন বিদ্রোহী নেতা পুনরায় জয়ী হন বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, এঁদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি মুহাম্মদ শামসুদ্দিন আহমেদ, তারেকুজ্জামান ও নাসির উদ্দিন মোল্লার নাম ছাড়া জুবায়ের আহমেদ ভূঁইয়া, নজরুল ইসলাম, আনিসুর রহমান, জাকির হোসাইন, শাহরিয়ার আলম শিপার, ডা. শহিদুল্লাহ শরীফ ও আসাদ উদ্দিনের নাম প্রকাশ করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত নির্বাচিত ৩৩ সদস্যের মধ্যে ২৫ পরিষদ সদস্যের নাম প্রকাশ করা হয়।
এ বিষয়ে দৈনিক কালের কণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে জামায়াতে ইসলামী দলের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির অধ্যাপক এ কে এম নাজির আহমদকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তবে জামায়াতের আমিরের অনিচ্ছায় কমিটি তদন্ত শেষ করেনি। বিষয়টি জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যেও বিভাজন সৃষ্টি করে। তবে মহাজোট সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম শুরু করলে বিষয়টি চাপা পড়ে যায়, বিদ্রোহীরাও চুপসে যান।
জানা গেছে, সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যে সমস্যা আছে এমন শাখাগুলোর নেতৃত্বে পরিবর্তন আনছেন কেন্দ্রীয় সভাপতি। ইতিমধ্যেই সংগঠনের ১১টি শাখায় উপনির্বাচন করা হয়েছে। শিবির সভাপতি ড. রেজাউল করিম ও সেক্রেটারি জেনারেল ডা. ফখরুদ্দিন মানিক দেশব্যাপী সাংগঠনিক সফর করে নির্বাচন পরিচালনা করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিবির সভাপতি আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর চাংপাই চায়নিজ রেস্টুরেন্টে বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। তবে সংগঠনে নতুন করে জটিলতা দেখা দেওয়ায় অনুষ্ঠানটি স্থগিত করা হয়েছে।
সিলেটের ঘটনার বিষয়ে কথা বলার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেও শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সেক্রেটারি জেনারেলকে পাওয়া যায়নি। দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার একযোগে পদত্যাগের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করে বলেন, 'শাহরিয়ার আলম শিপারের ছাত্রত্ব শেষ, এ জন্য বাকি সময়ের জন্য বিশেষ সদস্য সম্মেলন করে শফিকুল ইসলাম মুফিককে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।'
যোগাযোগ করলে সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির এহছানুল মাহবুব জুবায়েরও এ ধরনের ঘটনা অস্বীকার করে প্রতিবেদককে বলেন, 'কমিটি এক বছরের জন্য নির্বাচিত হলেও ছাত্রত্ব শেষ হওয়াসহ নানা কারণে ষাণ্মাসিক পরিবর্তনও হয়। সার্বিক পরিস্থিতির কারণে এ পরিবর্তন করা হয়নি, এখন হয়েছে।'

জামায়াত নেতারা ছাত্রশিবিরের অস্থিরতা সামাল দিতে পারছেন না

জামায়েতের আমিরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা একের পর এক বৈঠক করেও শিবিরের অস্থিরতা সামাল দিতে পারছেন না। বৈঠকে শিরির নেতাদের অবস্থান সৌহার্দ্যপূর্ণ হলেও বৈঠক শেষেই পাল্টে যাচ্ছে পরিস্থিতি।র্ িশবির সভাপতি রেজাউল করিম, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং ঢাকা মহানগর আমির রফিকুল ইসলাম খানের বিরম্নদ্ধে ক্রমেই সোচ্ছার হয়ে উঠছে শিবিরের একটি বৃহৎ অংশ। এবার আগামীকাল ৬ ফেব্রম্নয়ারি শিবিরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অভিযুক্ত ৩ নেতার হাত থেকে শিবিরকে রৰার আল্টিমেটাম দিয়েছে বিদ্রোহীরা। শিবির নেতারা বলেছেন, আশা করি দ্রম্নত সঙ্কটের সমাধান হবে। আর ব্যর্থ হলে ৬ তারিখেই পরিস্থিতি সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে। কারণ বিবাহিত হয়েও পরিচয় গোপন করেছেন শিবির সভাপতি। তার বিরম্নদ্ধে সংগঠনের অর্থ আত্মসাতেরও অভিযোগ আছে। মুজাহিদ ও রফিকুল ইসলামের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় ুব্ধ নেতাকর্মীরা। যুদ্ধাপরাধীদের দায়ও এড়াতে চায় শিবিরের একটি বড় অংশ। জানা গেছে, ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এতদিন প্রায় অভ্যনত্মরীণ কোন্দলমুক্ত থাকলেও এই মুহূর্তে সভাপতি ও সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়েছে মৌলবাদী এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অনিয়ম দুর্নীতি প্রবেশ করানোর দায়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে 'সেভ শিবির' এর ব্যানার থেকে আন্দোলনের হুমকি দেয়ার খরব পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার পর রীতিমতো তোলপাড় শুরম্ন হয়েছে। সঙ্কট সমাধানে দফায় দফায় বৈঠক করে ব্যর্থ হওয়ায় জটিলতার আশঙ্কা করছেন খোদ জামায়াত নেতারাই। তবে কারা কারা কেন্দ্র থেকে মাঠপর্যায় পর্যনত্ম শিবির সদস্যদের আন্দোলনে সংগঠিত করছে তার হিসাব মেলাতে পারছেন না জামায়াত নেতারা। একটি তদনত্ম কমিটি গঠনের কথা শোনা গেলেও এ নিয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। এর আগে দলের আন্দোলনের অন্যতম চালিকাশক্তি ছাত্র শিবিরের ৩৩তম কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় গত ১৮ জানুয়ারি। বঙ্গবন্ধু আনত্মর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে সভাপতি পদে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হন মুহাম্মদ রেজাউল করিম। কিন্তু সেক্রেটারি জেনারেলের পদ থেকে ছিটকে পড়েন শিশির মুহাম্মদ মুনির। এ পদে নির্বাচিত হন ডা. আবদুলস্নাহ আল মামুন। শিবিরের একটি বড় অংশ সেক্রেটারি পদে মামুনের আসাকে গ্রহণ করলেও মেনে নিতে পারেনি সভাপতি পদে রেজাউল করিমের দ্বিতীয় মেয়াদে আসাকে। কারণ নির্বাচনের আগে থেকেই ভেতরে ভেতরে সভাপতি পদে শিশির মোহাম্মদ মনিরের আসার সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছিল। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যায়ের নেতাকর্মীদেরও এই বিষয়টিতে ব্যাপক সমর্থন ছিল। এছাড়া অনেক আগে থেকেই সভাপতি রেজাউল করিমের পেছনে জামায়াতের কয়েক কেন্দ্রীয় নেতার আশীর্বাদ থাকার অভিযোগ ছিল। বিষয়টিকে ভালভাবে নিতে পারছিলেন না শিবিরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা। কিছুদিন যাবত ভেতরে ভেতরে ৰোভ থাকলেও কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলনের পর থেকে তা প্রকাশ্য রূপ নিতে থাকে। ৰোভ বাড়তে থাকে সম্মেলনে জামায়াতের কয়েক নেতার উপস্থিতি নিয়েও। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোঃ কামারম্নজ্জামান, ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমির রফিকুল ইসলাম খানসহ জামায়াতের কয়েক কেন্দ্রীয় নেতা। আগে থেকেই জামায়াতের কয়েক নেতার অবস্থ্থান নিয়ে প্রশ্ন ছিল। তার ওপর সদস্য সম্মেলনে কেন্দ্রীয় দুই নেতা উপস্থিত থেকে তাঁরা তাঁদের মতামতের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ শিবির নেতাকর্মীদের। সম্মেলনের পর থেকেই জামায়াতের দুই কেন্দ্রীয় নেতার বিরম্নদ্ধে ৰোভ বাড়তে থাকে সাধারণ শিবির সদস্যসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজপর্যায়ের নেতাদের। এতদিন ৰোভ ভেতরে ভেতরে থাকলেও গত ১ তারিখ ইন্টারনেটের মাধ্যমে মেইল পাঠিয়ে বিদ্রোহী গ্রম্নপ রীতিমতো সতর্ক করে দেয় জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্বকে। বিভিন্ন সাংবাদিকের ব্যক্তিগত মেইল নম্বরে একটি মেইল পাঠানো হয় 'সেভ শিবিরের' ঠিকানা থেকে। যেখানে বলা হয়েছে, 'প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা-শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল ড. মামুন ভাই পদত্যাগ করেছেন। লাস্ট পরিষদ মিটিংয়ে মামুন ভাই পদত্যাগ করেছেন। তাঁর পদত্যাগের কারণ হলো, বর্তমান প্রেসিডেন্ট রেজাউল করিমের দুর্নীতি, জামায়াত নেতা মুজাহিদ ও রফিকুল ইসলামসহ অনেকের নগ্ন অসাংবিধানিক হসত্মৰেপ। এই দুর্নীতিবাজ প্রেসিডেন্টের আন্ডারে সেক্রেটারি হয়ে তিনি কাজ করবেন না বলেই পদত্যাগ। সেভ শিবিরের পৰে বলা হয়, আমরা ইসলামের দুশমন রেজাউল করিমের পদত্যাগ চাই। আমরা আলস্নাহর কাছে দোয়া করি- আলস্নাহ তুমি রেজাউল করিম, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, রফিকুল ইসলাম খানসহ যারা শিবিরের ৰতি করল দুনিয়াতেই তুমি তাদের শাসত্মি দিও। মেইলে সাংবাদিকদের কাছে এসব সংবাদ প্রকাশের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, সারাদেশের শিবিরের হাজার হাজার সমর্থক, কর্মী, সাথী, সদস্য আমাদের সঙ্গে আছে। এরপর আরও একটি মেইল পাঠিয়ে জামায়েত নেতাদের রীতিমতো আল্টিমেটাম দিয়ে বলা হয়েছে, আগামী ৬ তারিখ শিবিরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগেই অভিযুক্তদের হাত থেকে শিবিরকে রৰা করতে হবে। কারণ কোন দুর্নীতিবাজ লোক ইসলামী রাজনীতি করতে পারে না। শিবিরের ভেতরের এই বিদ্রোহ নিয়ে গত দু'দিনে কয়েক কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও কেউ নাম উলেস্নখ করে কথা বলতে রাজি হননি। প্রত্যেকেই বলেন, নাম প্রকাশ করবেন না। কেউ কেউ বলেন, আমি আন্দোলনের সঙ্গে নেই তবে আন্দোলন যৌক্তিক। তবে অধিকাংশ নেতার আশঙ্কা, সঙ্কট সমাধানে ব্যর্থ হলে ৬ তারিখের পরে পরিস্থিতি সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে। এমনকি ৬ তারিখ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বিদ্রোহের মুখে পড়তে পারে শিবির সভাপতিসহ কয়েক জামায়াত নেতা। এক কেন্দ্র্রীয় নেতা (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক নেতা) বলেন, শিবিরের বর্তমান সভাপতি ও জামায়াতের কয়েক কেন্দ্রীয় নেতার অবস্থান নিয়ে আগেই ৰোভ ছিল। অনেকেই সভাপতি পদে বিদায়ী সেক্রেটারি শিশির মোহাম্মদ মনির আসবেন বলে আশা করেছিলেন। অধিকাংশ নেতাকর্মীই মনে করেন, সদস্য সম্মেলনে জামায়াতের কয়েক কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত থেকে সাধারণ সদস্যদের প্রভাবিত করেছেন। এবং এই বিষয়টিকে এখন মাঠপর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী সত্য বলেই মনে করেন। গত কয়েকদিনে সঙ্কট নিয়ে দুটি বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে শিবিরের এই নেতা বলেন, অবস্থা আসলে এমন যে দ্রত সমাধান না হলে শেষ পর্যনত্ম জামায়াতের কয়েক নেতার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়াতে পারে শিবির। আরেক কেন্দ্রীয় নেতা (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিবির নেতা) অবশ্য বলেন, মুজাহিদের বিরম্নদ্ধে যুদ্ধাপরাধের দায়ে সরাসরি অভিযোগ থাকার দায়ও এড়াতে চায় শিবিরের অনেক তরম্নণ নেতা। তাঁর বিরম্নদ্ধে ইচ্ছেমতো সংগঠনকে প্রভাবিত করার মতো অভিযোগ আছে আগে থেকেই। তার পরে আবার যুদ্ধাপরাধীর দায় থাকায় নতুন কর্মীরা তাঁকে ভালভাবে গ্রহণ করতে পারছেন না। কোন বিষয়ই তো স্পষ্ট নয়, আসলে সমস্যা কোন পর্যায়ে আছে? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ৰোভের ব্যাপকতা নিয়ে আমরাও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছি না। তবে একথা ঠিক যে, সংগঠনের প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোন দিনই এত বড় সঙ্কটের মুখোমুখি হয়নি। বিষয়টি নিয়ে চিনত্মিত জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা। এদিকে পুরো বিষয় নিয়ে অস্থিরতায় পড়লেও মুখ খুলছেন না জামায়াত নেতারা। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোলস্নার মোবাইলে দু'দিন যাবত বারবার রিং হলেও তিনি রিসিপ করেন নি। যার বিরম্নদ্ধে শিবিরের অভিযোগ দু'দিন যাবত সেই সেক্রেটারি জেরারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। বাববার মোবাইল করার পরে এক পর্যায়ে অপর প্রানত্ম থেকে জানানো হয়, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তাসনিম আলমের সঙ্গে কথা বলতে হবে। পরে তাঁর মোবাইলে কল করা হলে তিনি বলেন, শিবিরের ব্যাপারে জানতে হলে শিবিরকে কল করতে হবে। আমরা এ বিষয়ে কিছু বলছি না। কিনত্মু চলমান সঙ্কট সমাধানে আপনারা কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন কিনা? নিলে কি অবস্থা ? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, না আমরা এই মুহূর্তে এ ব্যাপারে কিছইু বলছি না।
 

যেভাবে জামায়াত বার বার ফাঁদে পা দেয়

আজকের পত্রিকাগুলোতে স্টিফেন র‍্যাপের বক্তব্য পড়ে পোস্টটা দিচ্ছি। বোঝা যাচ্ছে, আমেরিকা আস্তে আস্তে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে তার আগের অবস্থান থেকে সরে আসছে। প্রায় দশবছর ধরে বিভিন্ন ঘটনা বিশ্লেষণ করে আমার ধারণা হচ্ছে, জামায়াতের জন্য আরো বড় ফাঁদ রয়েছে সামনে। কয়েকটি ঘটনা মনে করার জন্য অনুরোধ করছি:

১. আমেরিকান রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাস বাংলাদেশে আসার পর সবথেকে বেশী আলোচিত যে দুটো উক্তি করেন তার একটি হচ্ছে 'জামায়াত একটি গণতান্ত্রিক দল, এর সাথে জঙ্গীবাদের কোন সম্পর্ক নেই।' (অপর উক্তিটি ছিল তৃতীয় শক্তি নিয়ে)। জামায়াতের উপর মহলে অনেক দিন ধরে হ্যারি কে টমাস সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা দেখেছি। জামায়াতের একজন প্রভাবশালী পরামর্শক তো একবার বলেই ফেললেন যে, তার মনে হয়েছে হ্যারি জামায়াতের রুকন।

হ্যারি এ সময়ে জামায়াতের শতভাগ আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হন।

২. জোট ক্ষমতায় থাকাকালে ডিজিএফআইতে কিছু সাবেক শিবির-কর্মীকে দিয়ে জামায়াতের সাথে যোগাযোগের কাজ করা হতো। তারা দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতের আস্থা অর্জন করে। তাদের মাধ্যমে জামায়াতকে কয়েকটি বিষয়ে রাজী করানো হয়:

ক. ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বায়তুল মোকাররমের সামনে চারিদিকে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র কর্মীদের মধ্যে মিটিং করানো। এই মিটিং এর কথা জানানো হলে বিভিন্ন স্থানে নেতারা কর্মীদের প্রশ্নের সম্মুখীন হন। তখন বলা হয় মিটিং এর নিরাপত্তা দিবেন স্বয়ং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। আসলে পরিকল্পনা ছিল সেইদিনই জামায়াতের প্রথম সারির সকল নেতাকে হত্যা করা এবং এই অযুহাতে মার্শাল ল' দেয়া। শিবিরের অকুতভয় কর্মীদের জন্য তা সম্ভব হয়নি।

খ. কেয়ারটেকার সরকারের সব কিছুকে নীরবে সমর্থন দেয়া।

মাহমুদুর রহমানও বিষয়টি কয়েকদিন আগে তার কলামে উল্লেখ করেছেন যে, ডিজিএফআই এর পরামর্শে জামায়াত কেয়ারটেকার সরকারকে নীরব সমর্থন দিয়ে যায়।

৩. ২০০৮ এর নির্বাচনে না যাবার সিদ্ধান্তে প্রায় শেষ পর্যন্ত অনড় ছিলেন খালেদা জিয়া। জামায়াত নেতারা (নিজামী-মুজাহিদ) তাকে রাজী করানোর চেষ্টা করলে তিনি তাদেরকে বলেন, 'নির্বাচনে যে যেতে চাচ্ছেন, আমাদেরকে দেকে ৫০টা, আপনাদেরকে দেবে ৩টা।' কিন্তু ডিজিএফআই জামায়াত নেতাদেরকে নিয়ত জানাতে থাকে যে তাদের হিসাব অনুসারে জোট ১৫০-১৬০টি আসন পাবে। নয়া দিগন্তও একটি জরিপ করে এই হিসাবই দেয়।

৪. নির্বাচনের পর বিএনপির কোমর ভেঙ্গে গেলেও, জামায়াতের শক্তি অক্ষুন্ন ছিল। সম্ভাবনা ছিল বিএনপি আবার জামায়াতের সাংগঠনিক শক্তির সাহায্যে মাঠে ফিরে আসবে। টিপাইমুখ সহ অন্যান্য ইস্যূতে জামায়াত ময়দানে দাপটের সাথেই ছিল। তখন পরিকল্পনা করা হয় শিবির ভাঙ্গার। ডিজিএফআই থেকে জানানো হয় শিবিরের তৎকালীন সেক্রেটারী শিশির মনির হচ্ছে র'এর এজেন্ট। তাকে সরানো না হলে সে জামায়াতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবী করবে। তাকে শুধু সরানোই হলো না, শিবিরের কার্যকরী পরিষদের সকল সদস্যকে সরানো হলো এবং কয়েক হাজার সাথী-সদস্যকে কারো ছাত্রত্ব শেষ করে, কারো বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিস্ক্রিয় করে দেয়া হলো। চরম সংকটের সময় কার্যকরী পরিষদের সদস্যরা নিজামী সাহেবের সাথে দেখা করতে গেলে তিনি দেখাও করেননি। এভাবে শিবিরের শক্তিকে চার ভাগের একভাগে কমিয়ে আনা হয়। সরকার আর অন্য সকল দল মিলে শিবিরের যে শক্তিক্ষয় করতে পারতো না, তাই করা হলো নেতৃত্বের অদূরদর্শীতার কারণে।

এর ফলে ফারুক হত্যা নিয়ে যখন শিবিরের উপর চরম দমন-পীড়ন চালানো হলো, তখন শিবিরের তেমন কোন প্রতিরোধ শক্তি ছিল না। জামায়াতও হেকমত দেখিয়ে সে সময় নীরব থাকলো। মাহমুদুর রহমানও বলেছেন, শিবিরের উপর নির্যাতনের কোন প্রতিবাদ না হওয়ায় এবার সরকার হাত বাড়ালো জামায়াত নেতাদের দিকে। তাদের গ্রেফতারেও কোন প্রতিবাদ হলো না।

বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, জামায়াত তাদের উপরে সম্ভাব্য নির্যাতন নিয়ে মুসলিম বিশ্ব কিংবা পশ্চিমা বিশ্ব কোথাওই পূর্ব জনমত তৈরী করেনি।

৫. একই ফাদে পড়ে এখন জামায়াত অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যূতে চুপ করে রয়েছে। নারী নীতির মত ইস্যূতে যখন আলেমগণ কঠোর অবস্থানে যাচ্ছেন, জামায়াত তখন একেবারে চুপ। আমিনীর ছেলেকে অপহরণ করা হলো, জামায়াত একটা বিবৃতি পর্যন্ত দিল না। কারণ একটাই, তাতে নেতাদের উপর অত্যাচার হতে পারে।

কিন্তু এর ফলে হতে যাচ্ছে অকল্পনীয় রকমের মারাত্মক। জামায়াত ক্রমেই ইসলামপন্থীদের সমর্থন হারাবে। ফলে আগামী নির্বাচনে বিএনপি তাকে সেইভাবে মূল্যায়ন করবে না। এতে এক পর্যায়ে জামায়াত এককভাবে নির্বাচনও করতে পারে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এলেও জামায়াতকে নিয়ে তারা এরশাদের মত খেলবে। মামলা আর ফাসির ভয় দেখিয়ে তাদেরকে কার্যত নিস্ক্রিয় এবং ধ্বংস করে দিবে।

শিবির সি.পি. রেজাউল করিম এর নিকট খোলা চিঠি

জনাব,
রেজাউল করিম, আপনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির এর বিভিন্ন র্পযায়ে দায়িত্ব পালন করার পর সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপতি র্নিবাচিত হয়েছেন, তাতে আমার কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু র্বতমানে আপনি পরপর যে সব কাজ করে যাচ্ছেন তাতে আপনার উপর সারা দেশের যে সব সদস্যরা আপনাকে সভাপতি বানিয়েছিল তারা সম্ভবত সকলেই আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। আমার মনে হয় এখন যদি আবার র্নিবাচন দেয়া হয়, তবে আপনি এক ভোট পাবেন কিনা সন্দেহ আছে। আপনি শিবিরের ডাইনামিক লিডার শিশির মনির কে তার পদ থেকে সর্ম্পুন একক ইচ্ছায় সরিয়ে দিয়েছেন। র্বতমান সময়ের আলোকে যিনি শিবিরের অন্যতম জনপ্রিয় নেতা হিসেবে গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে এবং যার কাছে শিবির নেতা-কর্মীরা আশা করছিল শিবিরকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা থেকে সুচিন্তিত বুদ্ধিমত্তার সাথে মোকাবেলা করে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যার বুদ্ধিমত্তা, প্রজ্ঞা বিভিন্ন ক্ষেত্রে জনশক্তির মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। যা শিবিরের গতানুগতিক নেতৃত্বে খুজে পাওয়া যায় না। আমার মনে হয় আপনি তার জনপ্রিয়তার কাছে নিজেকে হারিয়ে যেতে দেখে অত্যন্ত সুকৌশলে তাকে পথ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। সেক্রেটারী পদে ছাত্রত্ব রেখে সভাপতি র্নিবাচনের পর উক্ত সেক্রেটারীকে পুনরায় সেক্রেটারী মনোনীত না করা আমার মনে হয় শিবিরের ইতিহাসের প্রথম কোন ঘটনা। তবে হ্যা, আপনি তা করতে পারেন যদি তার পেছনে আপনার এবং র্কাযকরী পরিষদ সদস্যদের কাছে যৌক্তিক কোন কারন স্পষ্ট হয়। সেক্ষেত্রে আপনার এ সিদ্ধান্তটিকে সবাই বাহবা জানাতো। সেক্রেটারীর নাম ঘোষনা করার পর সবাই তা-ই মনে করছিল। কিন্তু সবার ভুল ভাঙ্গলো তখন যখন দেখলো র্কাযকরী পরিষদের সদস্যরা একে একে পদত্যাগ করছে এবং একই সাথে আপনার বিভিন্ন অনুচিত র্কমকান্ড প্রকাশ হচ্ছে। একটি খবরে পাওয়া গেছে যে আপনি জামায়াতের কোন নেতার পরামর্শে একাজটি সম্পাদন করেছেন এবং শিশির মনিরকে ‘র’ এর এজেন্ট হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। র্বতমান পেক্ষাপটে র্কাযকরী পরিষদ সদস্যদের পুন: পুন: পদত্যাগে আপনি এবং জামায়াতের ঐ নেতাকেই ‘র’ এর এজেন্ট মনে হচ্ছে। যারা শিবিরের গতিশীলতাকে ক্ষুন্ন করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন।

আপনি শিবিরের ইমেজ অনুযায়ী যদি সভাপতির পদ ধারন করতেন তবে একজন পরিষদ সদস্য আপনার উপর অনাস্থ্ প্রকাশ করছে অনুভব করার সাথে সাথে পদত্যাগ করা জরুরী মনে করতেন। কিন্তু আপনি এখনো স্বপদে বহাল রয়েছেন যা আমাদের অবাক করছে। আপনাকে ইম্পিচমেন্টের মাধ্যমে বাধ্য করা না হলে আপনি সরবেন বলে মনে হচ্ছে না। যেখানে ভারতের মতো দেশে কোন মন্ত্রীর কোন ব্যর্থতার সাথে সাথে তারা পদত্যাগ করে। সেখানে আপনার দ্বারা জাতি কিভাবে আশান্বিত হবে যে শিবির একটি দায়িত্বসচেতন সংগঠন। আসলে শিবিরের সভাপতি হিসেবে আপনার আর এক মুর্হুতের জন্য দায়িত্বপালন করার কোন যোগ্যতা আছে বলে আমার মনে হয় না, যতটুকু আমি শিবির কে জানি। শিবিরের র্কাযকরী পরিষদের সিদ্ধান্তই শিবিরের জন্য এক মাত্র সিদ্ধান্ত বলে সকল সাধারন নেতা-র্কমী মনে করে। সারা দেশের নেতা-র্কমীদের কেউ আর আপনাকে সভাপতি দেখতে চায় না এটা আমি নিশ্চিত বলতে পারি। আপনার পদত্যাগের মাধ্যমেই এ পবিত্র সংগঠনটি আগের চাইতে অনেক বেশী শক্তি নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে বলে আমি মনে করি।

ইতি,
শুভা

যেভাবে জামায়াত বার বার ফাঁদে পা দেয়

আজকের পত্রিকাগুলোতে স্টিফেন র‍্যাপের বক্তব্য পড়ে পোস্টটা দিচ্ছি। বোঝা যাচ্ছে, আমেরিকা আস্তে আস্তে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে তার আগের অবস্থান থেকে সরে আসছে। প্রায় দশবছর ধরে বিভিন্ন ঘটনা বিশ্লেষণ করে আমার ধারণা হচ্ছে, জামায়াতের জন্য আরো বড় ফাঁদ রয়েছে সামনে। কয়েকটি ঘটনা মনে করার জন্য অনুরোধ করছি:

১. আমেরিকান রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাস বাংলাদেশে আসার পর সবথেকে বেশী আলোচিত যে দুটো উক্তি করেন তার একটি হচ্ছে 'জামায়াত একটি গণতান্ত্রিক দল, এর সাথে জঙ্গীবাদের কোন সম্পর্ক নেই।' (অপর উক্তিটি ছিল তৃতীয় শক্তি নিয়ে)। জামায়াতের উপর মহলে অনেক দিন ধরে হ্যারি কে টমাস সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা দেখেছি। জামায়াতের একজন প্রভাবশালী পরামর্শক তো একবার বলেই ফেললেন যে, তার মনে হয়েছে হ্যারি জামায়াতের রুকন।

হ্যারি এ সময়ে জামায়াতের শতভাগ আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হন।

২. জোট ক্ষমতায় থাকাকালে ডিজিএফআইতে কিছু সাবেক শিবির-কর্মীকে দিয়ে জামায়াতের সাথে যোগাযোগের কাজ করা হতো। তারা দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতের আস্থা অর্জন করে। তাদের মাধ্যমে জামায়াতকে কয়েকটি বিষয়ে রাজী করানো হয়:

ক. ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বায়তুল মোকাররমের সামনে চারিদিকে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র কর্মীদের মধ্যে মিটিং করানো। এই মিটিং এর কথা জানানো হলে বিভিন্ন স্থানে নেতারা কর্মীদের প্রশ্নের সম্মুখীন হন। তখন বলা হয় মিটিং এর নিরাপত্তা দিবেন স্বয়ং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। আসলে পরিকল্পনা ছিল সেইদিনই জামায়াতের প্রথম সারির সকল নেতাকে হত্যা করা এবং এই অযুহাতে মার্শাল ল' দেয়া। শিবিরের অকুতভয় কর্মীদের জন্য তা সম্ভব হয়নি।

খ. কেয়ারটেকার সরকারের সব কিছুকে নীরবে সমর্থন দেয়া।

মাহমুদুর রহমানও বিষয়টি কয়েকদিন আগে তার কলামে উল্লেখ করেছেন যে, ডিজিএফআই এর পরামর্শে জামায়াত কেয়ারটেকার সরকারকে নীরব সমর্থন দিয়ে যায়।

৩. ২০০৮ এর নির্বাচনে না যাবার সিদ্ধান্তে প্রায় শেষ পর্যন্ত অনড় ছিলেন খালেদা জিয়া। জামায়াত নেতারা (নিজামী-মুজাহিদ) তাকে রাজী করানোর চেষ্টা করলে তিনি তাদেরকে বলেন, 'নির্বাচনে যে যেতে চাচ্ছেন, আমাদেরকে দেকে ৫০টা, আপনাদেরকে দেবে ৩টা।' কিন্তু ডিজিএফআই জামায়াত নেতাদেরকে নিয়ত জানাতে থাকে যে তাদের হিসাব অনুসারে জোট ১৫০-১৬০টি আসন পাবে। নয়া দিগন্তও একটি জরিপ করে এই হিসাবই দেয়।

৪. নির্বাচনের পর বিএনপির কোমর ভেঙ্গে গেলেও, জামায়াতের শক্তি অক্ষুন্ন ছিল। সম্ভাবনা ছিল বিএনপি আবার জামায়াতের সাংগঠনিক শক্তির সাহায্যে মাঠে ফিরে আসবে। টিপাইমুখ সহ অন্যান্য ইস্যূতে জামায়াত ময়দানে দাপটের সাথেই ছিল। তখন পরিকল্পনা করা হয় শিবির ভাঙ্গার। ডিজিএফআই থেকে জানানো হয় শিবিরের তৎকালীন সেক্রেটারী শিশির মনির হচ্ছে র'এর এজেন্ট। তাকে সরানো না হলে সে জামায়াতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবী করবে। তাকে শুধু সরানোই হলো না, শিবিরের কার্যকরী পরিষদের সকল সদস্যকে সরানো হলো এবং কয়েক হাজার সাথী-সদস্যকে কারো ছাত্রত্ব শেষ করে, কারো বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিস্ক্রিয় করে দেয়া হলো। চরম সংকটের সময় কার্যকরী পরিষদের সদস্যরা নিজামী সাহেবের সাথে দেখা করতে গেলে তিনি দেখাও করেননি। এভাবে শিবিরের শক্তিকে চার ভাগের একভাগে কমিয়ে আনা হয়। সরকার আর অন্য সকল দল মিলে শিবিরের যে শক্তিক্ষয় করতে পারতো না, তাই করা হলো নেতৃত্বের অদূরদর্শীতার কারণে।

এর ফলে ফারুক হত্যা নিয়ে যখন শিবিরের উপর চরম দমন-পীড়ন চালানো হলো, তখন শিবিরের তেমন কোন প্রতিরোধ শক্তি ছিল না। জামায়াতও হেকমত দেখিয়ে সে সময় নীরব থাকলো। মাহমুদুর রহমানও বলেছেন, শিবিরের উপর নির্যাতনের কোন প্রতিবাদ না হওয়ায় এবার সরকার হাত বাড়ালো জামায়াত নেতাদের দিকে। তাদের গ্রেফতারেও কোন প্রতিবাদ হলো না।

বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, জামায়াত তাদের উপরে সম্ভাব্য নির্যাতন নিয়ে মুসলিম বিশ্ব কিংবা পশ্চিমা বিশ্ব কোথাওই পূর্ব জনমত তৈরী করেনি।

৫. একই ফাদে পড়ে এখন জামায়াত অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যূতে চুপ করে রয়েছে। নারী নীতির মত ইস্যূতে যখন আলেমগণ কঠোর অবস্থানে যাচ্ছেন, জামায়াত তখন একেবারে চুপ। আমিনীর ছেলেকে অপহরণ করা হলো, জামায়াত একটা বিবৃতি পর্যন্ত দিল না। কারণ একটাই, তাতে নেতাদের উপর অত্যাচার হতে পারে।

কিন্তু এর ফলে হতে যাচ্ছে অকল্পনীয় রকমের মারাত্মক। জামায়াত ক্রমেই ইসলামপন্থীদের সমর্থন হারাবে। ফলে আগামী নির্বাচনে বিএনপি তাকে সেইভাবে মূল্যায়ন করবে না। এতে এক পর্যায়ে জামায়াত এককভাবে নির্বাচনও করতে পারে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এলেও জামায়াতকে নিয়ে তারা এরশাদের মত খেলবে। মামলা আর ফাসির ভয় দেখিয়ে তাদেরকে কার্যত নিস্ক্রিয় এবং ধ্বংস করে দিবে।

ছাত্রশিবিরের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের নেপথ্যে

রেজাউল করিম শিবিরের সভাপতি হওয়ার পর থেকেই সমস্যার সূত্রপাত। তার পূর্ববর্তী সভাপতি নেয়ামুল করিমকে সেক্রেটারী জেনারেল বানানোর পরামর্শ দিলেও রেজাউল করিম তা না মেনে শিশির মুহাম্মদ মনিরকে সেক্রেটারী বানায়।

এর কারণ ২ টি।
...
১. শিশির জুনিয়র এবং সে নিরেট অন্ধ আনুগত্য করবে বলে রেজাউল করিম ধরে নিয়েছিল।

২. নেয়ামুল সিনিয়র এবং স্পষ্টবাদী হিসাবে খুবই সুপরিচিত ছিল। এছাড়া যথেষ্ট জনপ্রিয়ও ছিল।

রেজাউল করিম নেয়ামুলকে তার জন্য চ্যালেঞ্জ ভেবেছিল। কার্যকরী পরিষদের মিটিং এ স্পষ্ট বক্তব্য রাখার জন্য ৬ মাসের মধ্যেই নেয়ামুল করিমকে বিদায় দিয়েছিল অনেকটা স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয় দিয়ে।

রেজাউল করিমের একগুঁয়েমী, স্বেচ্ছাচারিতা পরবর্তীতে আরো প্রকট হয়ে উঠে নিম্নলিখিত বিষয়ে ঃ-

১. পি.এইচ.ডি.করার জন্য ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন থেকে প্রাপ্ত প্রায় ২ লক্ষ টাকা পড়ালেখার জন্য ব্যয় না করে একটি কোচিং এর শেয়ার কিনেন রেজাউল করিম। এতে কার্যকরী পরিষদের সদস্য আহমদ জাহিদুল আনোয়ার, মাহবুব আলম সালেহী, গোলাম মাওলা শিমুল, শেখ নেয়ামুল করিম, হাফেজ আবদুল জব্বার খান, মিয়া মুজাহিদুল ইসলাম, শামসুল আরেফীন হাসিব, আবুল কালাম আজাদ, ইঞ্জিনিয়ার ফয়সাল বিন রহমান ও শিশির মনির সহ সিনিয়র সদস্যবৃন্দ তীব্র প্রতিবাদ করেন। তার বলেন নিজেদের তত্ত্বাবধানের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সভাপতির তত্ত্বাবধান আমাদের দায়িত্ব। এটা জনশক্তি জানতে পারলে ভাল হবে না। রেজাউল করিম বিষয়টি মোটেই পাত্তা দেয়নি। এর পর থেকেই তাদেরকে সংগঠন থেকে সরানোর জন্য রেজাউল করিম পরিকল্পনা করে।

২. মাহবুব আলম সালেহী, যিনি একাধারে জনপ্রিয় এবং মেধাবী ছিলেন শুধুমাত্র স্পষ্টবাদিতার কারণে তাকে সুইডেনে পাঠিয়ে সংগঠনকে একজন মেধাবী নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত করা হলো।

৩. মিয়া মুজাহিদুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ বিদায়ের জন্য তাদেরকে জামায়াত এর প্রতিষ্ঠানে চাকুরী দেয়া হয়েছে।

৪. বাকীদেরকে কোন সঠিক ব্যবস্থা না করেই বিদায় দিয়েছে। এতে সংগঠনের মেরু ভেঙ্গে দিয়েছে রেজাউল করিম। এই আওয়ামী লীগের আমলে দেদারছে সিনিয়রদের বিদায় দিয়ে নতুন নজির স্থাপন করল।

৫. ইতিহাস-ঐতিহ্যকে পদদলিত করে রেজাউল করিম তার মনের মত লোকদেরকে কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ এবং সেক্রেটারীয়েট সদস্য বানিয়েছে। জেলা সভাপতি এবং কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত সাথী শাখার সভাপতিকে কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় বিভাগের সদস্যদেরকে সেক্রেটারীয়েট সদস্য বানিয়েছে, যা পূর্বের কোন সভাপতি করেন নাই।

৬. যারা রেজাউল করিম এর অন্ধ আনুগত্য করে , তেল ঢালতে পারে তাদেরকে কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল বানিয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি জাকীরকে কেন্দ্রীয় নেতা বানানো হয়েছে। অথচ এই জাকীর এর সদস্য পদ স্থগিত ছিল। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতিকে নিয়মিত তেল প্রদানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতির পদ বাগিয়ে নিল। যে ড.আবু ইউসুফের নির্দেশে শহীদ জোবায়ের কে লীগের ছেলেরা হত্যা করলো সেই ইউসুফকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে এই জাকীর। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের আসন টি পাকাপোক্ত করে নেয়। আর রেজাউল করিমের অন্ধ আনুগত্যের পুরস্কার স্বরূপ এখন সে কেন্দ্রীয় লিডার। শোনা যাচ্ছে তাকেই পরবর্তী সেক্রেটারী বানানো হবে। আইনবিদ আবু সাঈদ খান হলো রেজাউল করিমের অন্ধ আনুগত্যশীল। শোনা যাচ্ছে পুরস্কার স্বরূপ তাকে বায়তুল মাল সম্পাদক করা হবে। দেলোয়ার হোসেন সাঈদী হলো আরেক তেলবাজ। রেজাউল করিমের অন্ধ পাগল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেক্রেটারী হত্যার পিছনে তার দুরদর্শী নেতৃত্বের অভাব ছিল। কিন্তু শুধুমাত্র রেজাউল করিমের আস্থাভাজন হওয়ার কারণে তাকেও পরবর্তী সেক্রেটারী বানানো হতে পারে।

৭. কেন্দ্রীয় সভাপতি থাকা অবস্থায় অনেকেই বিয়ে করতে পছন্দ করেন। এতে লাভ হলো - সংসারের সকল জিনিস সংগঠনের বিভিন্ন শাখা হতে গিফট পাওয়া যায়। যেমন-ঢাকা মহানগরী উত্তর যদি আলমারী দেয় তবে চট্টগ্রাম মহানগরী দিবে ফ্রিজ, অন্য শাখা দিবে টেলিভিশন, খাট, সোফা,শাড়ী, সেলফ, টেবিল, ভরি ভরি অলংকার, ড্রেসিং টেবিল, কম্পিউটার ইত্যাদি। আর যদি ছাত্রী সংস্থার কেন্দ্রীয় সভানেত্রী বা সেক্রেটারী বা কেন্দ্রীয় নেত্রী বিয়ে করা যায় তা হলে তো সোনায় সোহাগা। রেজাউল করিম এর উপরে সংগঠনের কেন্দ্রীয় বায়তুল মাল ফান্ড থেকে লক্ষাধিক টাকা গ্রহণ করেছেন বিয়ে উপলক্ষ্যে।

৮. লক্ষাধিক টাকা গ্রহণ করে ফ্ল্যাট করাটা এখন ওপেন সিক্্েরট।

৯. শিশির মনিরের স্পষ্টবাদিতা সর্বজনবিদিত। যুদ্ধপরাধ, স্বাধীনতা যুদ্ধ ইত্যাদি বিষয়ে তার ভূমিকা ছিল সৎ সাহসের বহিঃপ্রকাশ। এ ব্যাপারে সংগঠনের স্পষ্ট ভূমিকার কথা শিশির মনির প্রায়ই বলতো। বর্তমান প্রজন্মের কথা বিবেচনা করো সে এসব করতো। এটা এটা জামায়াতের আঁতে ঘা লাগে। শিশিরকে সরানোর জন্য তখন থেকেই জামায়াত চাপ দিতে থাকে। রেজাউল করিম ও জানে, জামায়াতের অন্ধ আনুগত্য না করলে পরবর্তীতে চাকুরী কিংবা লিডার হওয়া যাবে না। তাই শিশিরকে সে সরিয়ে দেয়। বুলবুল, মঞ্জু, সেলিম, জাহিদ সবাই জামায়াতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে। তাই জামায়াতের চাকুরী পেতে হলে জামায়াতের কথা শুনতে হবে। শিশির মনিরকে তাই বলির পাঁঠা হতে হল।

১০. কেন্দ্রীয় অফিসে প্রায়ই হাই ফাই খাওয়া-দাওয়া হয়। বৈঠক মানেই বিরিয়ানী, গরু, মুরগী, পোলাও, মাছ, খাসী ইত্যাদি। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল আহমদ জাহিদুল আনোয়ার , শিশির মনির সহ একাধিক সিনিয়র কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল। বিষয়টি রেজাউল করিম পাত্তাই দেয়নি এ বলে যে, আমাদের টাকা আছে আমরা যা খুশি খাব। বায়তুল মালের বিশাল ফান্ড আছে আমাদের। তাই খাওয়া-দাওয়ায় কোন প্রবলেম নেই।

১১. সফরে বিমানে সভাপতি বা সেক্রেটারী প্রায়ই যাওয়া আসা করেন। অনেক শাখা সভাপতিও বিমানে যাতায়াত করেন। এতে যাতায়াত খাতে বিশাল ব্যয় হয় যা বায়তুল মালের ফান্ড হতে বহন করা হয়। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সেই একই উত্তর। এভাবে বায়তুল মালের টাকার যা খুশি তা ব্যবহার করে এই দায়িত্বশীলরা। সংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের ফল এই বায়তুল মাল। আর কেন্দ্রীয় নেতারা তা নিজেদের ভোগ বিলাসের জন্য ব্যয় করে। ছিঃ ! ছিঃ !

১২. রেজাউল করিম খাওয়ার সময় পিঁয়াজ খেতে খুবই পছন্দ করেন। বিষয়টি নিয়ে শিশির মনির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এই বলে যে, রাসূল(সাঃ) এটা পছন্দ করতেন না। এটা বাদ দিলে ভাল হয়। বিষয়টি শিশির মনিরের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।

১৩. সকালে ফজরের পর ঘুমানো নেতাদের পুরানো অভ্যাস। কর্মীরা কাজ করবে আর নেতারা ঘুমাবে এটাইতো নিয়ম !! বিষয়টি হাফেজ আবদুল জব্বার খান তুললে তাকে বিদায় দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন রেজাউল করিম।

এ ধরণের আরো অনেক ঘটনা আছে যা বেদনাদায়ক,

মর্মান্তিক। সভাপতির একচ্ছত্র আধিপত্য সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক। এর রোধ প্রয়োজন।

অনাস্থাপত্রে সাড়া পেয়ে সেক্রেটারিসহ শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির ২৪ জনের পদত্যাগ

শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে ৭ শ’ শিবির সদস্য অনাস্থা প্রকাশ করার পরও জামাত হাই কমান্ড কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেলসহ শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির ২৪ সদস্য সোমবার পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগী নেতাকর্মীরা জানান, গত ২৬ জানুয়ারি সভাপতির বিরুদ্ধে ৪০ পৃষ্ঠার একটি অনাস্থাপত্র সংগঠনের কার্যকরী পরিষদের পুরানা পল্টন কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মী হত্যার পর থেকেই শিবির সভাপতি রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থতার দীর্ঘদিনের অভিযোগ আরো জোরালোভাবে তুলে ধরেন তার বিরোধীরা। এরই জের ধরে শিবিরের ৪ হাজার ১৩৪ জন সদস্যের এক দশমাংশের বেশি অর্থাৎ ৬৭৬ জন সদস্য গত ২৬ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অনাস্থাপত্রটি পেশ করেন।
এতে বলা হয়েছে, রেজাউল করিম ইসলামী ছাত্র শিবিরের সংবিধানের ১৬ নং ধারায় বর্ণিত সর্বোৎকৃষ্ট সাংগঠনিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হওয়ায় সংগঠনের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে জামাত হাই কমান্ড কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় গত সোমবার রাতে একযোগে পদত্যাগ করেন সেক্রেটারি জেনারেল ডা. আবদুল্লাহ আল মামুনসহ কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের ২৪ সদস্য।
ছাত্র শিবিরে পদত্যাগের ঘটনা এই প্রথম। জানা গেছে, জামাত নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ শিবির সভাপিতর পক্ষ নেয়ায় শিবিরের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মিটছে না।
সভাপতির বিরুদ্ধে পাঠানো অনাস্থাপত্রে স্বাক্ষরকারী ৬৭৬ জনের মধ্যে ২৬৯ জনই ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের শিবির সদস্য। এর বাইরে বুয়েটের ৭ জন ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ জন আর বাকিরা চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের বিভিন্ন কমিটির প্রতিনিধি।

শিবিরে গণপদত্যাগে জামায়াতে তোলপাড়

আরও ২শ' সংগঠন ছেড়েছেন
আলতাব হোসেন/রাজীব আহাম্মদ
দীর্ঘকাল পর জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির বড় ধরনের অন্তর্কলহে জড়িয়ে পড়েছে। শিবির সভাপতির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অভিযোগে অনাস্থা জানিয়ে শিবিরে গণপদত্যাগ অব্যাহত রয়েছে। কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকসহ কার্যকরী পরিষদের ২৪ সদস্য সোমবার পদত্যাগ করেছেন। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার শিবিরের বিভিন্ন শাখার ১৯৪ জন সদস্য পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে শিবিরের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া পদত্যাগকারীদের অনুসারী আরও অনেকে শিবিরের রাজনীতি থেকে পদত্যাগ করতে পারেন। শিবিরের গণপদত্যাগে অভিভাবক সংগঠন জামায়াতের মধ্যে চলছে তোলপাড়। যদিও এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। শিবিরের ৪১ সদস্যের কার্যকরী পরিষদের ২৪ জন পদত্যাগকারী হলেন_ শিবিরের কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক আহমেদ জায়দুর রহমান, অর্থ সম্পাদক আবদুর জব্বার, প্রচার সম্পাদক গোলাম মাওলা শিমুল, শিক্ষা সম্পাদক যোবায়ের আহমেদ ভূঁইয়া, আন্তর্জাতিক সম্পাদক এসএ হাসিব, ছাত্র কল্যাণ সম্পাদক গোলাম মর্তুজা, শিশু কল্যাণ সম্পাদক জাকারিয়া পাইলট, বিতর্ক সম্পাদক ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, পাঠাগার সম্পাদক আবুল কালাম আযাদ, ঢাবি সভাপতি আনিসুর রহমান, বিজ্ঞান সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার, মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, আইন সম্পাদক আবু সাঈদ খান, সমাজকল্যাণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন, তথ্য সম্পাদক মোহাম্মদ আসাদ উদ্দিন, ঢাকা মহানগর পূর্বের সভাপতি মইন উদ্দীন, ঢাকা মহানগর পশ্চিমের সভাপতি মাকসুদুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুল আলম গোলাপ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মোহাম্মদ জাকির হোসাইন, চট্টগ্রাম মহা

Constitution of chhatra-SHIBIR : (ছাত্রশিবিরের সংবিধান) (Bangla+English)


পূর্বকথা



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

যে কোন প্রতিষ্ঠানের সংবিধানই একটি মৌলিক দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়। সংগঠন পরিচালনা, শৃঙ্খলা ও নীতিমালা সংরক্ষণে এর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সংবিধান এক পবিত্র আমানত। এর প্রতিটি দিক কুরআন, সুন্নাহ ও ইসলামী আন্দোলনের ঐতিহ্যের আলোকে প্রণয়ন করা হয়েছে। তাই বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সকল কর্মতৎপরতা এই সংবিধানের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়।

মৌলিক নীতিমালাকে অক্ষুন্ন রেখে পরিবেশ ও পরিস্থিতির দাবি অনুসারে এ সংবিধানে বিভিন্ন সময় কিছু কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে।

সংবিধানের বর্তমান এ সমন্বিত সংস্কৃরণ সর্বশেষ সংশোধনীসহ প্রকাশিত হলো।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সংবিধানের আলোকে সংগঠনের যাবতীয় কাজ আঞ্জাম দেয়ার তৌফিক দিন। আমীন!



Bismillahir Rahmanir Rahim